নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী জুনের মধ্যেই প্রায় ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেবে।
ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সবার হাতে কার্ড তুলে না দিতে পারলেও, সেদিন আমরা স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করবো।’
ইসি সচিব আরো জানান, স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফরাসি কোম্পানি অবারথু টেকনোলজির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কোম্পানিটি স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণ করবে। ৭৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের এই চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। জুনের মধ্যেই বিদ্যমান প্রায় ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে চায় ইসি।
ইসির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, স্মার্টকার্ড সবার হাতে পৌঁছে দেওয়ার আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। স্মার্ট কার্ড দেওয়ার পর ভোটারদের যাতে অযথা হয়রানির স্বীকার না হতে হয় সেজন্য বিশেষ এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে বা তথ্য-উপাত্তে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে সংশোধনের প্রয়োজনীয় দলিলাদি এবং ২০০ টাকার ফি জমার ট্রেজারি চালান বা ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার জমা দিতে হবে। সোনালী, ট্রাস্ট ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করা যাবে। নির্ধারিত আবেদন ফরম উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট www.ec.org.bd/www.nidw.gov.bd থেকে ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে।
স্মার্ট এনআইডি কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে এ কার্ডের প্রয়োজন হচ্ছে। দেশের সকল ভোটারকে বিদ্যমান এনআইডি কার্ডের পরিবর্তে স্মার্ট এনআইডি কার্ড দেওয়া হবে। তাই নির্ভুল স্মার্ট এনআইডির জন্য বিদ্যমান এনআইডি কার্ডে কোনো ভুল আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
এ ছাড়া ভোটার ডাটাবেসে ভোটারের তথ্য-উপাত্ত সঠিক আছে কিনা তা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে www.ec.org.bd/www.nidw.gov.bd নির্ধারিত লিংকে লগ ইন করে দেখা যাবে। বিদ্যমান এনআইডি কার্ডে বা তথ্য উপাত্তে ভুল থাকলে নির্ভুল স্মার্ট এনআইডির জন্য তা এখনই সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, উপজেলা সার্ভার স্টেশনগুলো চালুর প্রক্রিয়া চলছে। যন্ত্রপাতি লাগানোর কাজ শেষ হলে ভোটাররা নিজের এলাকায় এ সুবিধা পাবেন। তার আগে অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
যারা নতুন ভোটার হতে আগ্রহী তারা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ঘরে বসেই আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া যারা ভোটার আছেন তারা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিজস্ব তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। পাশাপাশি তথ্য সংশোধন, পরিবর্তন ও ছবির স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে আবেদন করতে পারবেন। হারিয়ে যাওয়া ও নষ্ট হওয়া পরিচয়পত্রও পুনরায় পেতে নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করা যাবে। কখন, কোথায় থেকে তা সংগ্রহ করবেন তাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান ইসি সচিব।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে এখন নিজস্ব ডাটা দেখার সুযোগ পাবে ভোটাররা। এতে তাদের যে ভোগান্তি ছিল তা কমে আসবে। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে, কারো বয়স ১৮ হলেই অনলাইনে তিনি নিজেই ভোটার হতে পারবেন; যিনি ভোটার হয়েছেন, তিনি নিজেই তার ব্যক্তিগত তথ্য এবং নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রের তথ্য দেখতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের পরিবর্তন, সংশোধন ও হালনাগাদের জন্য আবেদন করতে পারবেন; ছবি ও স্বাক্ষর পরিবর্তন, আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ ও অন্যান্য প্রয়োজনে সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নিতে পারবেন। হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া পরিচয়পত্র প্রতিস্থাপনের আবেদন করতে পারবেন ও আবেদনকারী নিজেই নিজের অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
ইসি জানায়, অধিকতর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্মার্টকার্ডে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য আটটি ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফিকেশন ও স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। স্মার্টকার্ডে তিন স্তরে মোট ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট সন্নিবেশিত থাকছে। এখন যে পরিচয়পত্র আছে সেটি সহজেই জাল করার প্রবণতা দেখা গেছে। কিন্তু স্মার্টকার্ডে সেটি সম্ভব হবে না। স্মার্টকার্ডের মাইক্রোচিপসে নাগরিকের সকল তথ্য দেওয়া থাকবে। সরকারি সব অনলাইন সুবিধা, চাকরির জন্য আবেদন, ব্যাংক হিসাব খোলা এবং পাসপোর্ট তৈরি, ই-গভর্নেন্স ও ই-পাসপোর্ট সেবাসহ মোট ২৫টি সেবা প্রাথমিকভাবে পাওয়া যাবে। তবে এ সেবার পরিধি আরো বাড়তে পারে।