চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেতু ভেঙে দুর্ঘটনাকবলিত রেল ইঞ্জিন ও তেলের বগি থেকে পড়ে যাওয়া ফার্নেস অয়েল নতুন করে ছড়িয়ে পড়ায় জীববৈচিত্র্যে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বোয়ালখালী খালে ভেসে উঠছে মরা মাছ। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েলে হুমকির মুখে পড়বে কর্ণফুলী ও হালদাসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা এলাকায় সেতু ভেঙে খালে ডুবে যাওয়া ওয়াগনের তেল কর্ণফুলী নদীসহ আশপাশের প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তেল কর্ণফুলী নদী ছাড়িয়ে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতেও মিশেছে। চট্টগ্রাম মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রভাতী রানী দেব বলেন, ‘তেল ছড়িয়ে পড়ায় বোয়ালখালী খাল এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইস আলম মণ্ডল বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল বোয়ালখালী খাল ছড়িয়ে কর্ণফুলী কিংবা হালদায় গেছে কি না সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে কী পরিমাণ তেল হালদায় গেছে সেটি পরীক্ষা করে বলতে হবে।’
গত শুক্রবার বোয়ালখালী এলাকায় সেতু ধসে পড়ে যাওয়া রেল ইঞ্জিন ও তিনটি তেলের ট্যাংকার উদ্ধার না হওয়ায় দোহাজারীর সাথে ট্রেন চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনার পর ফলে বিপুল জ্বালানি তেল খালে বিলে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব সংগ্রহের চেষ্টা করছে যমুনা অয়েল কোম্পানি। গত বুধবার বিকেলে সেতু মেরামতের কাজ শেষে উদ্ধারকারী ট্রেনের মাধ্যমে রেলইঞ্জিন ও তিন বগি পানি থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে তেলবাহী ওয়াগন থেকে নতুন করে ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, ‘ভারী ফার্নেস অয়েল পানিতে অক্সিজেন শূন্যতা তৈরি করছে। এসব তেল খাল হয়ে পাশের নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় প্রাকৃতিক প্রজননের ক্ষতির পাশাপাশি ওই এলাকার জীববৈচিত্র্যে বিপর্যয় নেমে আসবে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, ‘সেতু মেরামতের কাজ প্রায় শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলেরও প্রস্তুতি চলছে।’ আগামী দুই দিনের মধ্যে ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধার করে রেল চলাচল পুনরায় শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
বোয়ালখালী খালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের স্থাপন করা ‘অয়েলবোম’ তেল উদ্ধারে কাজে না আসায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওয়াগনের ছিদ্র সারাতে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন রেলওয়ের ডুবুরিরা। নদী, খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল ঘটনাস্থল থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন হাজার ১৩ লিটার ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ করে বিক্রি করেছে স্থানীয় লোকজন।