[english_date]

যৌবন ধরে রাখতে রক্তস্নান করতেন এলিজাবেথ

সময়টা ১৬০৯ সাল। হাঙ্গেরির রাজা দ্বিতীয় ম্যাথিয়াস তার নিজ প্রাসাদ থেকে দূরবর্তী সেজথে রাজপ্রাসাদে কিছু সান্ত্রী পাঠালেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন কিছু নারীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে আটকে রাখা হয়েছে। আর সেই নারীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাধর পরিবারগুলোর অনেকেই। নারীদের নিয়ে ঠিক কী ঘটছিল সেখানে তা জানার জন্যই মূলত রাজা ম্যাথিয়াস সান্ত্রী বাহিনীকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সান্ত্রী বাহিনী পৌঁছানোর পর অনেক অজানা খবর জানতে পারেন রাজা ম্যাথিয়ান। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওই রাজপ্রাসাদটিতে থাকতেন ম্যাথিয়াসেরই প্রিয় কাউন্টের স্ত্রী কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথোরি।

কে এই কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথোরি? ইতিহাসে এলিজাবেথ বাথোরি একজন সিরিয়াল কিলার হিসেবেই পরিচিত। হাঙ্গেরির এক সম্ভ্রান্ত জমিদারকে বিয়ে করার পর তার নামের সঙ্গে কাউন্টেস উপাধিটি যুক্ত হয়। তবে শুধু বৈবাহিক সূত্রেই নয় এলিজাবেথ ছিলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো বোন এবং পোল্যান্ডের রাজার বোন। সামাজিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে কাউন্টেস পদবির মাধ্যমে এলিজাবেথ হাঙ্গেরির উঁচু মহলে প্রবেশ করলেও তার ভেতরের হিংস্রতা একটুও কমেনি। তৎকালীন সময়ে, হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষের কাছে এলিজাবেথ ছিলেন একজন রহস্যময়ী নারী। তার কালো চুল আর ফ্যাকাসে চেহারা কারো বুকে ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। তার হিংস্রতার জন্য সেসময় তাকে ‘দ্য ব্লাড কাউন্টেস’ নামে ডাকা হতো। ১৫৬০ সালে জন্ম নেয়া এলিজাবেথের শৈশব শুরুই হয় এক ভয়ানক মানসিক রোগ দিয়ে। যা তারই শৈশবের নার্স লুনা জো’র ভাষ্যে জানা যায়।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরপরই তার কাউন্ট স্বামী যুদ্ধে চলে যান। স্বামী যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর এলিজাবেথের সঙ্গে তার কাকার সখ্যতা বাড়ে। যিনি ছিলেন একজন শয়তানের উপাসক। কাকার সঙ্গে থাকাকালীন সময় থেকেই তার ভেতরের বিকারগ্রস্ততা প্রকাশ হতে শুরু করে। কালোজাদুর খাতিরে একের পর এক মানুষ খুন করতে থাকেন এলিজাবেথ। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৫৮৫ থেকে ১৬১০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয়শ যুবতী নারীকে হত্যা করেছেন তিনি। যদিও মাত্র আশিজন মানুষকে হত্যার দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। স্থানীয় কৃষক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের তরুণী মেয়েরাই ছিল এই হিংস্র কাউন্টেসের প্রধান শিকার।

রাজার স্ত্রী হওয়া স্বত্ত্বেও অনেক পুরুষের সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিল। তবে জানা যায়, শারীরিক চাহিদা মেটাতে তিনি সবসময় নারীদের ব্যবহার করতেন। নিজের কালোজাদু এবং যৌবনকে ধরে রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে আসতেন তিনি। এরপর তাদের রক্তে স্নান করে শয়তানের উপাসনা করতেন কাউন্টেস। তার ঘরে সাধারণ কারো প্রবেশাধিকার না থাকলেও বিশেষ কয়েকজন মানুষ প্রবেশ করতে পারতেন। ধারণা করা হয়, এই মানুষগুলোই  মূলত তার সকল অপকর্মের স্বাক্ষী ছিল। যাদের পরবর্তীতে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেসময় কাউন্টেসের ঘর থেকে অনেকগুলো মৃত মানুষের হাড় এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

এলিজাবেথের এই নৃশংসতার কথা তৎকালীন রাজপরিবারের অনেকেই জানলেও তার ক্ষমতাধর স্বামীর কারণে বলতে পারতেন না। যদিও শেষরক্ষা হয়নি এই কাউন্টেসের। তার স্বামী যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলে নিজেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগে কাউন্টেসের তিন সহযোগীর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং কাউন্টেসকে নিজ মহলের উপরের ঘরে নির্বাসন দেয়া হয়। সেই ঘরে নির্বাসনে থাকাকালীন সময়েই ১৬১৪ সালে তিনি মারা যান।

তার বিরুদ্ধে অনেক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও তা প্রমাণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল তৎকালীন বিচারিক আদালতকে। বিচারচলাকালীন সময়ে তার দুই সহযোগী স্বীকার করে যে, প্রায় ৩৭টি হত্যার স্বাক্ষী তারা নিজেরাই। অবশ্য অন্য এক সহযোগির মতে এই হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ৫০। তবে মহলের নিরাপত্তারক্ষীদের মতে,তারা নিজেরাই কাউন্টেসের নির্দেশ অনুসারে প্রায় দুইশ’ লাশ সরিয়েছে। কিন্তু বিচারের এক পর্যায়ে একজন স্বাক্ষী কাউন্টেসের লিখিত একটি খাতা হাজির করেন আদালতের সামনে, যেখানে ৬৫০ জনের একটি তালিকা ছিল, যার সকলেই কাউন্টেসের রক্তস্নানের রসদ হয়েছিল।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ