প্রায় এক বছর পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনের শীর্ষস্থানে ফিরে এসেছে ব্যাংকিং খাত। গত কয়েক দিনে টেলিযোগাযোগ ও ওষুধ খাতের দরপতনই বাজার মূলধনে ব্যাংকিং খাতের আধিপত্য বিস্তারে সহায়তা করেছে। নানা কারণে বিনিয়োগকারীরাও খাতটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। টানা তিন কার্যদিবসের দরপতনের পর গতকাল বেশির ভাগ শেয়ারের দর বাড়লেও চালকের আসনে ছিল ব্যাংক। ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ২৬ শতাংশই ছিল ব্যাংকিং খাতের অবদান।
দীর্ঘসময় ব্যাংকিং খাত ডিএসইর বাজার মূলধনের শীর্ষস্থানে থাকলেও গত বছর তা টেলিযোগাযোগ খাতের দখলে চলে যায়। মন্দ ঋণসহ নানামুখী সংকটের কারণে গত কয়েক বছর ব্যাংকিং খাতের মুনাফা প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় শেয়ারদরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তবে চলতি বছর সংকট কিছুটা কাটছে। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় শেয়ারদরও বাড়ছে।
গতকাল ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৩টিরই দর বেড়েছে। প্রতিটি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের বাজার মূলধন গড়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬২০ কোটি টাকায়, যা বর্তমানে ডিএসইর সর্বোচ্চ। গত মার্চে বড় দরপতনের পর এটিই ব্যাংকিং খাতের সর্বোচ্চ বাজার মূলধন। টানা দরপতনের কারণে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ব্যাংকিং খাতের বাজার মূলধন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমে যায়।
সিংহভাগ ব্যাংকের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। গতকাল এ খাতের ৩০ কোম্পানির মোট ১০৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ। গতকাল লেনদেনের সেরা ১০ কোম্পানির তালিকায় চারটিই ছিল ব্যাংক। একক কোম্পানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার।
এদিকে টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের পর গতকাল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রায় ৫৬ শতাংশ সিকিউরিটিজের দরবৃদ্ধি পায়। বিপরীতে কমে ৩২ শতাংশের।
দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরবৃদ্ধি ও হ্রাস পাওয়ার হার ছিল যথাক্রমে ৬২ শতাংশ ও ২৪ শতাংশ। বাকি শেয়ারগুলোর দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে ডিএসইতে সার্বিকভাবে ৫৬ শতাংশ শেয়ারের দর বাড়লেও ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের লেনদেন হওয়া ৫২ কোম্পানির ৭৯ শতাংশেরই বাজারদর বেড়েছে। বড় মূলধনি এ দুই খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় উভয় বাজারের প্রধান দুই মূল্যসূচক এক শতাংশের বেশি বেড়েছে। শেয়ারদর ও সূচক বাড়ার পাশাপাশি দুই বাজারের কেনাবেচাও রোববারের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
টানা কয়েক দিনের দরপতনের পর গতকালের শেয়ারের দরবৃদ্ধি অনেকটাই কাঙ্ক্ষিত বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। আগের তিন কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১০৫ পয়েন্ট হারিয়েছিল। এতে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমায় অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষাকৃত কম দরে শেয়ার কেনায় আগ্রহী ছিলেন, যা চাহিদা বাড়িয়ে দরবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। গতকালের দরবৃদ্ধির ফলে আগের কয়েক দিনের দরপতনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধির খবরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
ডিএসই ও সিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এদিন লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দর বাড়লেও ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক এবং বীমা খাতেরই সিংহভাগ শেয়ারদর বেড়েছে। মূল্যসূচক বৃদ্ধিতে এ খাতগুলোর অবদান ছিল বেশি। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বেশিরভাগ ফান্ডের এবং প্রকৌশল, টেলিযোগাযোগ ও সিমেন্ট, তথ্য ও প্রযুক্তি, সেবা ও নির্মাণ খাতের অধিকাংশ শেয়ারের বাজারদর বেড়েছে। তবে জ্বালানি ও বিদ্যুত্, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্রসহ বাকি খাতগুলোয় ছিল মিশ্র অবস্থা।
গতকাল ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৪১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বেশি। তবে ডিএসইতে বাড়লেও সিএসইতে কেনাবেচা কিছুটা কমেছে।
ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— ইউসিবিএল, মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং, বেক্সিমকো ফার্মা, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, অলিম্পিক ইন্ডা., প্রিমিয়ার সিমেন্ট, সিটি ব্যাংক ও সাইফ পাওয়ার।
দরবৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— বিএসসিসিএল, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক, আইসিবি এএমসিএল ২য়, এনএলআই ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, যমুনা ব্যাংক, আইসিবি সোনালী ১, বিএসআরএম স্টিল, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম ১ আইসিবিএ।
অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— জিলবাংলা সুগার, মেঘনা পিইটি, বিডি ওয়েল্ডিং, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্টাইলক্র্যাফট, এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ১, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, মুন্নু সিরামিকস, লিগ্যাসি ফুট ও বিডি ল্যাম্পস।