চাঞ্চল্যকর ফেলানী হত্যা মামলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) জওয়ান অমিয় ঘোষকে আবারও নির্দোষ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে ফেলানীর পরিবার ও বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা।
দীর্ঘদিন মুলতুবির পর গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের সোনারি ক্যাম্পে আদালত বসে। গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা করে কোর্ট মার্শালের সমতুল্য বিএসএফের নিজস্ব আদালত এই রায় দিয়েছে। বিএসএফের পাঁচ সদস্যের নিজস্ব আদালতের প্রধান ছিলেন বিএসএফ আধিকারিক সি পি ত্রিবেদী। পাঁচজন সদস্য মূল মামলার শুনানিতে বিচারক ছিলেন।
এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন নিহত ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। রেডিও তেহরানকে তিনি বলেন, এ রায় আমরা মানি না। আমার চোখের সামনে মেয়েটাকে যারা গুলি করে মেরেছে তাদের আদালত নির্দোষ ঘোষণা করেছে। আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। বিএসএফ-এর আদালতে ন্যায় বিচার পাইনি। আশা করছি ভারতের আদালতে ন্যায় বিচার পাব। এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন ফেলানীর বাবা।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলান রেডিও তেহরানকে বলেন, সীমান্তে ফেলানী হত্যার বিষয়টি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু বিচারের নামে যা হলো তা দুঃখজনক। তবে, শুধু ফেলানী নয়, প্রতিদিনই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটছে কিন্তু কোন সরকারই এ বিষয়ে জোরালো কোন কিছু বলেনি। আর তাই এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত আছে বলেই মনে করেন এ মানবাধিকার কর্মী।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে বাবার সঙ্গে নিজের দেশ বাংলাদেশে আসছিল ১৬ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুন। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কোচবিহার জেলার চৌধুরীহাট সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরোনোর সময় বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্য অমিয় ঘোষ তার বন্দুক থেকে গুলি করেন। এরপর কাঁটাতারের ওপরে ফেলানির দেহ দীর্ঘক্ষণ ঝুলে ছিল। ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলে, দোষী অমিয় ঘোষের বিচারের ঘোষণা দেয় বিএসএফ। তাদের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট (জিএসএফসি) ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেন। সেই রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক। পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু করতে প্রায় এক বছর লেগেছিল। তিনবার পুনর্বিবেচনার কাজ স্থগিতও করা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর পুনর্বিবেচনার পরও তারা সেই রায়ই বহাল রেখেছে। বিএসএফের মহাপরিচালক এই রায় অনুমোদন করবেন। তবে, ফেলানীর পরিবার এই রায় চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।