২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকারীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ডে’র সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে এখনই ওই ‘মাস্টারমাইন্ডে’র ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছেন না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘এই দুই হত্যাকাণ্ড গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সম্ভাব্য ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে? তাকে ঘিরেই এখন চলছে তদন্ত। হত্যাকাণ্ডের কারণ শিগগিরই জানা যাবে। পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হতে আরো কিছু সময় লাগবে বলেই জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজার তাভেল্লা ও রংপুরে কুনিয়ো হোশি হত্যাকাণ্ডের পর দুটি ঘটনাকেই এক ছকে ফেলে তদন্ত করা হচ্ছে। র্যাব ও ডিবির গোয়েন্দা টিম ঢাকায় কাজ শেষে এখন রংপুরে।

রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিয়ো হোশি হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল রবিবার সকাল পর্যন্ত রংপুর মহানগরী ও মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর বিএনপি নেতা মুনতাসির শামীম লাইকো, জেলা যুবদল নেতা মাহবুবুল আলম রোমেন। এই দুই নেতাকে হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতায় গ্রেফতার করা হয়েছে কি না তা জানাতে পুলিশ রাজি হয়নি। কুনিয়ো হোশির মৃত্যুর ঘটনায় কাউনিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম বাদী হয়ে শনিবার রাতে অজ্ঞাত ৩ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
গতকাল দুপুরে জাপান দূতাবাস থেকে আগত ডা. কারসিয়া মাজিয়ার উপস্থিতিতে কুনিয়ো হোশির লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, হোশিকে খুব কাছ থেকে ৩টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর প্রতিনিধি দলটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন ও ফরেনসিক বিভাগের চিকিত্সকদের সাথে অধ্যক্ষের চেম্বারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
এর আগে শনিবার রাতে জাপানি দূতাবাসের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মি. কিনজুর নেতৃত্বে তার সহকারী মি. রহমান এবং কারসিয়া মজিয়া নামে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ ৩ সদস্যের একটি দল রংপুরে গিয়ে পুলিশ সুপারের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। পরে তারা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা নিহত জাপানি নাগরিকের লাশ পরীক্ষাসহ আলামত সংগ্রহ করে। কুনিয়ো হোশির লাশ পরীক্ষা করেন প্রতিনিধি দলের সাথে আসা দুই জাপানি চিকিত্সক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা বুকে, কাঁধে ও হাতে যে স্থানে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেসব স্থান দীর্ঘক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করেন। রাজশাহী থেকে রাজশাহী রেঞ্জ সিআইডির এএসপি এনাম আহম্মেদের নেতৃত্বে আসা ৫ সদস্যের একটি দল গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন।
কুনিয়ো হোশির ভাড়া বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের একটি অত্যাধুনিক মেশিন পাওয়া গেছে। এই মেশিন দিয়ে হাঁস-মুরগির খাবারসহ বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করা যায় বলে জানা গেছে। এর বেশি কিছু কেউ বলতে পারেননি। রংপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুস ছালাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা জানাতে তারা অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে ঢাকায় খুন হওয়া ইতালীয় নাগরিক চেজার তাভেল্লা হত্যা রহস্যের জট খুব শিগগিরই খুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে ঘটনাস্থলের আশেপাশের মোবাইলের কললিস্ট, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যেসব ক্লু পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর ভিত্তিতে তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। সেগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাইয়ের কাজও চলছে। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর, এখনি স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না তারা।
সূত্র জানায়, ভাড়াটে ‘কিলারদের’ সম্ভাব্য তালিকায় যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের ধরতে পারলেই রহস্যের জট খুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

ডিএমপি উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, তাভেল্লার খুনিদের কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধারের জন্য গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৬ জন সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) দল হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য নানা কারণ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। তথ্যগুলো খণ্ড খণ্ড। সব তথ্য একত্রিত হলে তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।  প্রসঙ্গত, গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তরা গুলি করে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা চেজারকে হত্যা করে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ