২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

থার্টি ফার্স্ট নাইটে তাহলে করবেনটা কী

বছর শেষে আবারও এল ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। সারা বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যথাযথ মর্যাদায় দেশের ক্যালেন্ডারের পাতায় ফের স্থান করে নিল বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘থার্টি ফার্স্ট’। বাতাসে কান পাতলেই বাজছে পুরোনো বছরকে বিদায় জানানোর করুণ সুর! তবুও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনের আহ্বানে আজ বলতে হয়–‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
থার্টি ফার্স্টের উৎসব উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি। শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে সম্মানিত নগরবাসীর কাছে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওইদিন বা ওই রাতে উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, পটকা ও ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে আইডি কার্ড ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গুলশান, হাতিরঝিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যারা টুকটাক খোঁজ রাখেন, তাদের সবারই জানা। তবু একটু বলি। ‘উৎসবেরই’ এক দেশ বাংলাদেশ। কিছু হলে উৎসব, কিছু না হলেও উৎসব। নানা সমস্যায় মানুষ রাজপথে এসে যখন দাঁড়ায়, এর পরের বিষয়গুলো এগোতে এগোতে এমন এক জায়গায় পৌঁছায়; যেন তা উৎসব আয়োজন হয়ে যায়।
এই যেমন–শাহবাগে ব্যাটারি রিকশার ‘উৎসব’, তো রাজুতে উৎসব পায়েচালিত রিকশার। প্রেসক্লাবের সামনে এক পক্ষের আনন্দ ‘উৎসব’, তো প্রেসক্লাবের পেছেন আরেক পক্ষের বেদনা ‘উৎসব’।
শান্তিবাগ মোড়ের ‘উৎসব’ এক সময় হয়ে যায় অশান্তির, রাস্তায় দাবি আদায়ের আয়োজন যানজটে কাহিল করার ‘উৎসব’ হিসেবে ধরা দেয় নগরবাসীর কাছে। সাতরাস্তায় যেন আট উপলক্ষের ‘উৎসব’। হাতিরপুল হাতিরঝিল কিংবা এলিফ্যান্ট রোডেও চলে কত শত উৎসব আয়োজন! এমনকি উৎসব কচুক্ষেত নীলক্ষেতেও। নিউমার্কেট পার হয়ে সায়েন্সল্যাব মোড়ে কখনও বা ‘উৎসব’ আয়োজনে মাতে ঢাকা কলেজ আর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এত সব উৎসবের ভিড়ে তাই আর নতুন করে এবার থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে কোনো উৎসব আয়োজনের আগ্রহ নেই বলে কেউ কেউ এরই মধ্যে আকার ইঙ্গিত দিচ্ছেন মোড়ের অলিতে গলিতে। সে হিসেবে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা মান্য করে প্রায় সবাই থার্টি ফার্স্টে যার যার অবস্থান থেকে নিজ গৃহে কোয়ালিটি টাইম ব্যয় করবেন বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।
বাসায় থেকে থার্টি ফার্স্টে তাহলে রাজধানীবাসী আসলে করবেনটা কী? কীভাবে হবে সেই আয়োজন? নানা মুণির নানা মত, নানাজন নানা পরামর্শ দিতেই পারেন এই থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে। তবে সবচেয়ে কার্যকরী ও মনোমুগ্ধকর কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে পারেন আপনারা, যা এসেছে দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ পথ ধরে। চলুন আরেকটিবার মিলিয় নিই বিষয়গুলো।
শীত আসার পর সময়ের অভাব ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা এখনও একবারও গোসল করার সময় পাননি, তারা ঘুম থেকে উঠে আস্তে ধীরে থার্টি ফার্স্টের দিন সকাল সকাল গোসলটা সেরে নিতে পারেন। দুপুরের খাবারের পর বিটিভির যুগে ফিরে গিয়ে পরিবারের সবাই মিলে একটা বাংলা সিনেমা দেখতে পারেন অনায়াসেই। লাইফটা এনজয় করার এ ও এক বড় সুযোগ।
থার্টি ফার্স্টে বন্ধুদের বাসায় ডেকে লুডু খেলার ব্যবস্থা করতে পারেন। ‘পানিটানি খাওয়া’ যেহেতু বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগে থেকেই, সেহেতু বন্ধুরা মিলে লেবু ও বিটলবণ দিয়ে কোক খেতে পারেন। অবশ্য সারা রাত ধরে কোক, পানি, লবণ, শসা–এসব না খাওয়াই ভালো।
বাসায় বড় ছাদ থাকলে আশপাশের ফ্ল্যাটের আগ্রহীদের নিয়ে হাডুডু খেলতে পারেন, এই একটা দিনের জন্য হলেও। সারা বছর ধরে লেখা স্বরচিত কবিতা ও গান যেগুলো কোথাও কাউকে শোনাতে পারেননি, ওইদিন ফেসবুক লাইভে এসে গাইতে পারেন, পড়তে পারেন। তবে এ সময় কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে নেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
নানা কাজের জন্য যেসব শিক্ষার্থী সারা বছর পড়ালেখা করতে পারেননি, তাঁরা থার্টি ফাস্টের রাতে মনযোগ দিয়ে রাতভর পড়ালেখা করতে পারেন। জানেনই তো অনেক কিছুরই বিকল্প থাকলেও পড়ালেখার বিকল্প নেই।
থার্টি ফার্স্টে উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, পটকা ফাটানো এবং ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে, তাই উন্মুক্ত স্থানে সে রাতে এগুলো না করাই উত্তম। খুব দরকার হলে অবশ্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের বেডরুমে চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, মুরব্বিরা আপনাকে এতে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আইডি কার্ড ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারপরও যদি খুব ইচ্ছে হয়, যেতে পারেন। ঢোকার চেষ্টাও করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ মৃদু প্রহার করলে পরামর্শদাতাকে দোষারোপ না করাই ভালো হবে।
থার্টি ফার্স্টের সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে ভার্চুয়ালি সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করতে পারেন। নিজেরাই শিল্পী, নিজেরাই শ্রোতা হলে সময়টা আনন্দেই কাটবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া পাড়ার ছেলেদের ডেকে বাসার সামনে শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন পরষ্পরের মধ্যে সম্প্রীতি বন্ধন দৃঢ় হবে, অন্যদিকে বাড়বে হৃদ্যতাও।
ওই রাতে গুলশান, হাতিরঝিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এ ব্যাপারে আপনাকেও নিতে হবে ব্যাপক প্রস্তুতি। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের সহয়তা করতে পারেন। সারা রাত রাস্তা পাহারা দিতে দিতে দেখবেন কখন যেন সকাল হয়ে গেছে, পেরিয়ে গেছে জীবনের আরও একটি ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। এ যেন অবিশ্বাস্য! নগরবাসীর থার্টি ফার্স্ট নাইট শুভ হোক।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ