করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে না ঘাবড়ে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সংকটে সবকিছু নিয়ে সরকার জনগণের পাশে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে বলবো ঘাবড়ালে চলবে না। এই অবস্থার মোকাবিলা করবার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সেভাবেই সবাইকে চলতে হবে। যাতে করে আমরা আমাদের দেশের প্রতিটি জনগণকে সুরক্ষিত করতে পারি।’
রোববার (২৯ মার্চ) বিকেলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেওয়া অনুদান গ্রহণকালে এ আহ্বান জানান তিনি।
আতঙ্কিত হয়ে না হয়ে দেশবাসীকে ধৈর্যের সঙ্গে এই সংকট মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই করোনার বিস্তার যাতে না হয়, সেজন্যই আমরা বাংলাদেশে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং সেটা অব্যাহত রাখছি।’
‘করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করাসহ একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দেশের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় এবং দেশের মানুষ যাতে আর্থিকভাবে কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থাও করেছে।’
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ যারা সহযোগিতা চেয়েছেন তাদেরও সহযোগিতা করতে পারবো। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে এবং মানবিক কারণেই আমরা তা করবো। শুধু নিজেদের দেশ নয়, অন্য দেশেরও যদি কিছু প্রয়োজন হয়, তাহলে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।’
সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই ঘরে থাকবেন এবং কোনো কাজ থাকলে ঘরে বসে করবেন। কিন্তু মানুষের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। যাতে করে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পরতে না পারে।’
করোনা বিস্তাররোধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এটার বিস্তার যাতে না হয়, সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা বাংলাদেশে নিতে সক্ষম হয়েছি এবং প্রথমে সচেতনতা সৃষ্টির পর ধাপে ধাপে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দিয়েছি। বলতে গেলে সেই জানুয়ারি মাস থেকেই আমাদের এই পদক্ষেপগুলো চলছে।’
এই সংকটে দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কষ্টে থাকে খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, সাধারণ নিম্নবিত্ত। অনেকেই আছেন যারা খেয়ে পরে চলতে পারলেও বর্তমানে কিন্তু এই অবস্থা চলার ফলে তারা সত্যিই খুব কষ্টে আছেন।’
দরিদ্র মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদেও কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া একান্তভাবে জরুরি। প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আমাদের তালিকা তৈরি করা আছে, আরও তালিকা করা দরকার। কারণ, মানুষকে ঘরে আটকে রাখলেই হবে না, তাদেরও খাদ্য ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আমাদের করে দিতে হবে।’
দরিদ্রদের জন্য সরকারের সহায়তা অব্যহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খাদ্যশস্য আমরা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। পাশাপাশি দুস্থ গোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তাসহ (ভিজিএফ) যেসব আর্থিক সহায়তা আমরা দিয়ে থাকি তা অব্যাহত থাকবে।’
‘আমাদের সড়ক ও নৌপরিবহন যেহেতু বন্ধ, তাই তাদের শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। তারা ঘরে বসা। খাবার কিনে মজুদ করার মতো অবস্থা তাদেরও নাই। এই শ্রেণীর মানুষের কথাও আমাদেও চিন্তা করতে হবে। তাদের তালিকা করে, আমাদের খাদ্যশস্য যা যা প্রয়োজন তা পৌঁছেয়ে দিতে হবে।’
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য পোশাক এবং পিপিই সামগ্রী দেওয়ার দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদেরও সুরক্ষিত করা দরকার। সেই বিষয়ে আমাদেরও দৃষ্টি দিতে হবে। এরই মধ্যে আমরা সরকারিভাবে কাজ করছি। আবার কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সহযোগিতা করছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিচ্ছেন। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সবাইকেও সুরক্ষার প্রয়োজনীয় সুরক্ষার পোশাক দিতে হবে।’
‘কেননা তারাই মূলত রোগী নাড়াচাড়া করেন। এছাড়া হাসপাতালের অন্য যারা কাজকর্মে যুক্ত থাকেন তাদেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।