বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লুঘুচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলে হাঁটু পানি জমে গেছে। এছাড়া টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়কে পানি উঠায় বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের সাথে বান্দরবানের যোগাযোগ। বৃষ্টিতে হাজার হাজার একর জমির মৌসুমী ফসলের খেত নষ্ট হয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার ভোররাত ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
টানা বর্ষণে নগরীর প্লাবিত এলাকার মধ্যে নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, মোগলটুলি, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, ষোলশহর, চকবাজার, কাপাসগোলা, চাক্তাই, বাকলিয়া এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর সড়কে যানবাহন কম। এছাড়া গুরুত্পূর্ণ মোড়গুলোতে যানজট প্রকট হয়ে উঠেছে। রিকশা ও অটো রিকশায় আদায় করা হচ্ছে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লুঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য উঠানামায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কের মাহালিয়া ও বাজালিয়া বড়দুয়ারা এলাকা তলিয়ে গেছে। ফলে বান্দরবান সদরের সাথে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর থেকে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এত সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী অনেক গাড়ী। সাতকানিয়ার ছদাহা, কেউচিয়া, জনার কেউচিয়া, আমিলাইশ, নলুয়া, চরতিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বসত ঘরে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
বর্ষণ অব্যাহত থাকায় চন্দনাইশের ধোপাছড়ি, দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, বরমা, বরকল ও জোয়ারা ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়া নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ জমির মৌসুমী ফসলের খেত পানির নীচে তলিয়ে পড়েছে। ফলে এসব খেতে উৎপাদিত সকল ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আগামী কয়েকদিন বর্ষণ অব্যাহত থাকলে কোন খেতই অক্ষত থাকবেনা বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। মৌসুমী ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির দামে প্রভাব পড়েছে। এই কয়েকদিনে বাজারে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিকহারে।
টানা বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শংখনদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষণ আর কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে শংখনদীর পানি দু’কূল উপচে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। এতে নদীর ভাঙনও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ নিয়ে নদীপাড়ে বসবাস করা মানুষের মাঝেও আতংক বিরাজ করছে। টানা বর্ষণের কারণে শংখনদীর ভাঙন রক্ষার কাজও বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে বাঁশখালীতে ভারী বর্ষণের ফলে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রবল বর্ষণে উপজেলার চাম্বল, নাপোড়া, পুঁইছড়ি, সাধনপুর, পৌরসদর জলদী, কালীপুর, বৈলছড়ি ও পুকুরিয়া,গন্ডামারার আবাইত্যা ঘোনা চিংড়ি প্রজেক্টসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে ছড়াগুলোতে পানির স্রোত অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাছের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের প্রজেক্ট গুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বিহার ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বিহার এলাকায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লুঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও কক্সবাজারের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর ও নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর-বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছে এসে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।