শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে কুড়িগ্রামের ছিটমহলগুলোতে চালু করা হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে শিক্ষা বঞ্চিত এসব ছিটমহলে শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্যে ২৮টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বন্ধ দ্বার খুলে যাওয়ায় দারুণ খুশি ছিটমহলবাসীরা।
অবশ্য, শিক্ষার আলো সম্প্রসারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
শিশুদের কল-কাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন ছিটমহলের পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলো। জেলার দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের ছোট কামাত, বড় কামাত, রাসের মেলাসহ বিভিন্ন পাড়ার মসজিদে কিংবা কারও বাড়ির আঙিনায় গড়ে উঠেছে এসব শিক্ষা কেন্দ্রগুলো। শিশুরা দল বেঁধে হৈ-চৈ করতে করতে যাচ্ছে পাঠশালায়। সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গাইছে জাতীয় সংগীত। এরপর বাংলা, ইংরেজি ও আরবি বর্ণমালাগুলো পড়ছে সমস্বরে। লেখাপড়ার এমন সুযোগ পেয়ে খুশি খুদে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘তারা আগে লেখাপড়া করত না। এখানেই প্রথম লেখাপড়ার করার সুযোগ পেল। স্কুল পেয়ে তারা অনেক খুশি। তারা বলে লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চায়। মানুষের মত মানুষ হতে চায়।’ কুড়িগ্রাম দাসিয়ারছড়া ছিটমহল ছোট কামাত শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক সুলতানা শিরিন জানান, ‘তারা সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা করে পাঠদান করছেন। সপ্তাহের ছয় দিন হবে ক্লাস। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ জন। এ জন্য শিক্ষকরা মাসে দুই হাজার ৩০০ টাকা করে সম্মানী পাবেন।’
শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং বিড়ম্বনার অবসান হওয়ায় আনন্দের কথা জানালেন স্থানীয়রা। ছিটমহলবাসী বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানকে লেখাপড়া করাতে পারতাম না। এখন এখানে স্কুল হওয়াতে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারছি।’ এদিকে, ছিটমহলগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ছিটমহল সমন্বয় পরিষদের গোলাম মোস্তফা নেতা। ‘’দীর্ঘ ৬৮ বছর থেকে বঞ্চিত ছিটমহলগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রথম এগিয়ে আসায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানান।’ অবশ্য, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথাও জানালেন জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা নুরুল আমিন আনসারী।
তিনি আরো বলেন, ‘সদর, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে ১২টি ছিটমহল রয়েছে। এর মধ্যে দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে ২৩টি এবং বড় গাড়োলঝাড়া, ছোট গাড়োলঝাড়া, ছেউতিকুর্শা, দীঘলটারী ও সাহেবগঞ্জ- এই পাঁচটি ছিটমহলে একটি করে মোট ২৮টি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৪০ জন। আপাতত মসজিদ এবং উৎসাহী ব্যক্তিদের বাড়ির আঙিনায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, আরবি, মাসলা-মাসায়েল, দৈনন্দিন জীবনের পাক-পবিত্রতা ইত্যাদি বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ৬টি ছিটমহলে ২৮টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ৮শ’ ৪০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠ দেয়া হচ্ছে।