করোনাভাইরাসে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে আজ আতঙ্ক। বাদ যায়নি নানা সমস্যায় জর্জরিত ছোট্ট ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। দেশটিতে এরইমধ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও ৭৫ । ভাইরাস থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। ফলে বেশি বিপাকে পড়েছে দিন এনে দিন খাওয়া হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের ক্রমণকালে কয়েকটি বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর মধ্যে আছে, ‘স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠনের মাধ্যমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ এলাকায় অসহায়, দুঃস্থ, দিনমজুর ও খেটে-খাওয়া মানুষ খাবারের জন্য যোগাযোগ করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনে সহায়তায় বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করে সারাদেশে কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী বোরো মৌসুমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাদের ধান কাটাসহ সার্বিক সহযোগিতা করবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ইউনিটের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকার জেলা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।’
এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতারা নিজ নিজ এলাকার ইউনিটে সব কার্যক্রম সমন্বয় করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারসামগ্রী প্রকৃত দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণে স্থানীয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে। কেউ যেন কোন অনিয়ম না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখবে। কোন অনিয়ম হলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাবে।
ছাত্রলীগ জানায়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ থেকে দেওয়া পোস্টারে নিজ নিজ ইউনিটের ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও ১০ জন মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ নেতার সমন্বয়ে ‘স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা টিম’ এর মুঠোফোন নম্বর সংযোজন করে প্রচার করবে এবং সাহায্য প্রার্থী কেউ যোগাযোগ করলে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস দুর্যোগের কারণে গেল মাসে সরকার বন্ধ ঘোষণা করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। ছুটি পেয়ে নিজ এলাকায় চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তবে নিজ এলাকায় এসে বসে থাকেননি সনজিত। দেশের ক্রান্তিলগ্নে নিজ এলাকার গরিব-দুঃখী, বিপাকে পড়া মানুষদের জন্য নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে বোরো মৌসুমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ইউনিটের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকার জেলা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা দল।
নাটোরের লালপুরে ৩৩৩ ফোন করে ত্রাণ চাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তারের মারপিটের শিকার অসহায় কৃষক শহিদুল ইসলামের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নির্দেশে উপজেলার ৯নং অর্জুনপুর বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের আঙ্গারিপাড়া গ্রামে শহিদুল ইসলামের বাড়িতে যান জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম জেমস।
এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি শহিদুলকে মারপিটের দুঃখ প্রকাশ করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং ইউপি চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ সময় জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ শহিদুলের পরিবারের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইউসুফ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী নান্নুসহ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খাদ্যসংকটে থাকা অসহায়দের তালিকা করে রাতের আঁধারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে নড়াইল জেলা ছাত্রলীগ।
ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি নেতাকর্মী দিয়ে খোঁজ নিয়ে এবং হটলাইন খুঁলে জানতে চাইছে ত্রাণ পাচ্ছেন না এমন কেউ আছে কি না। লকডাউনের কারণে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না এমন পরিবারকে ওষুধও পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। জেলাকে সুরক্ষিত রাখতে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করার পাশাপাশি প্রবেশপথেও বসিয়েছে পাহারা।
বোরো ধানের মৌসুম আসায় শ্রমিক সংকটের কথা চিন্তা করে হটলাইন খোলার কথাও জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রয়োজনে কৃষক ফোন দিয়ে চাইতে পারবেন ধান কাটার সহায়তা। জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবী টিম গড়ে এই কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করছে জেলা ছাত্রলীগ। আর এই কাজে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনা দিচ্ছেন এলাকার সাংসদ এবং ক্রিকেট ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।