শক্তি উৎপাদনে পানির ব্যবহার অতি প্রাচীন। মেশিনের চাকা বা টারবাইন ঘুরানো এবং বিভিন্ন শিল্পের পাওয়ার হাউজ হিসেবে পানির ব্যবহার কয়েক শতকের পুরনো কৌশল।
এবার প্রকৌশলীরা পানিকেই প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করে কম্পিউটার বানানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। একটি ক্ষুদ্র চ্যানেল জালের মধ্য দিয়ে চৌম্বুকায়িত কণার নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের মাধ্যমে এ ধরনের প্রসেসর তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এ ধরনের কম্পিউটার অনেক জটিল গণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও সক্ষম।
এর কৌশলটি হলো- চৌম্বুকায়িত ন্যানোপার্টিক্যাল সমৃদ্ধ এক ফোঁটা পানিকে এক সেট লজিক্যাল গেটের মধ্যে চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত করা গেলে সেটি যেকোনো লজিক্যাল অপারেশন করতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে এ ধরনের একটি ব্যবস্থা একটি সাধারণ কম্পিউটারের মতোই যেকোনো গণনা করতে সক্ষম। তবে এর গতি হবে অনেক ধীর।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মানু প্রকাশ তার দুই জন পিএইচডি গবেষণারত ছাত্রের সঙ্গে যৌথভাবে এমন একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভাবকরা বলছেন, ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার যেকোনো গণনা করে ডিজিটাল লজিক্যাল গেটের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রনের নিয়ন্ত্রিত প্রবাহের মধ্য দিয়ে। ঠিক একই কাজ করা হচ্ছে পানির ফোঁটার প্রসেসরে।
একটি কাচের প্লেটে লোহার পাতলা পাত দিয়ে প্রথমত এক সেট লজিক্যাল গেট তৈরি করা হয়। এরপর এতে তেল ছড়িয়ে দিয়ে উপরে আরেকটি পাতলা কাচের প্লেট এমনভাবে স্থাপন করা হয় যাতে তরলটি স্যান্ডউইচের মতো আটকে থাকে। এবার সিরিঞ্জের মাধ্যমে চৌম্বুকায়িত ন্যানোপার্টিক্যাল সমৃদ্ধ পানির কয়েকটি ফোঁটা ওই তেলের স্তরের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়।
এই ব্যবস্থাটি একটি বড় ম্যাগনেটিক কয়েলের সিরিজের মাঝখানে বসানো হয়। এই চৌম্বকক্ষেত্রটি প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করা যায়। যার প্রভাব পড়ে ওই পানির ফোঁটাগুলোর ওপর।
কাজ করার সময় চৌম্বকক্ষেত্রটি এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যাতে পানির ফোঁটাগুলো নির্দিষ্ট লজিক্যাল গেট অতিক্রম করে প্রয়োজনীয় বর্তনী পূর্ণ করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেয়। উদ্ভাবকদের দাবি, এই ‘প্রবাহী কম্পিউটার’ জীববিজ্ঞান, রসায়ন এবং অন্যান্য ভৌত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির লজিক্যাল বিহ্যাভিয়ার (যৌক্তিক আচরণ) যা প্রকৃতিতে দৃষ্টিগোচর তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।