নেপালে ভূমিকম্পে এক মাস পেরলেও হাজার হাজার মানুষ এখনও বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন ক্যাম্পে। বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় তারা ফিরে যেতে পারছেন না। নেপালের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এসব ক্যাম্পে সহায়তা করছে বিভিন্ন সংস্থা। সেনাবাহিনী বলছে, ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে চরম মানবিক সঙ্কটে পড়বে নেপাল। আর পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া নেপালি জনগণের পুনর্বাসন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হিমালয় কন্যা নেপাল। জাতিসংঘের হিসেবে, ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালের ১১টি পার্বত্য জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের পর ২৭ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র চালু করে নেপালি সেনাবাহিনী। কাঠমান্ডুর খোলা মাঠ বা রাস্তার পাশে স্থাপন করা অন্তত ২০টি শেল্টার সেন্টারে আশ্রয় নেয় আতঙ্কিত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
এদেরই একজন বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় একটি বিল্ডিং এ কাজ করার অবস্থায় আমি দেয়ালের নিচে চাপা পড়ি। প্রায় ১ ঘণ্টার পর পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। একটু সুস্থ হওয়ার পর থেকে এই শেল্টার সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছি। জানি না কবে বাড়ি ফিরতে পারবো।’ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সহায়তায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এসব শেল্টার সেন্টার।
টুডিখেল শেল্টার সেন্টার ইনচার্জ কর্নেল জং বাহাদুর রানা বলেন, ‘এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো যেসব সুবিধা আমরা মানুষকে দিচ্ছি। যারা বিভিন্ন সংস্থা থেকে সরবরাহ করছে। তা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিকল্প কোনো কিছু আমাদের সামনে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন। যাতে মানুষজন তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারে। সবার পুনর্বাসন হলে আমরা ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে দিতে পারবো।’
তবে শেল্টার সেন্টারে বসবাসরত মানুষসহ পুরো নেপালের পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানালেন নেপালি কংগ্রেস পার্টি সংসদ সদস্য ভিমসেন দাস প্রধান। তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না। যেসব এনজিও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের সাহায্য করছে তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
ভিমসেন দাস প্রধান আরও বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। তাই নেপালে পুনর্গঠনে অন্যান্য দেশগুলোকে সাহায্য করতে হবে।’ সেনাবাহিনী জানায়, বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরতদের মধ্যে ২৫ শতাংশই রাজধানীর বাইরে থেকে আসা। শুধু ত্রাণ সরবরাহই নয়, ক্যাম্পে অবস্থানরত শিশুদের শিক্ষা এবং গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবাও দিচ্ছে সংস্থাটি।