[english_date]

পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের আলোকরশ্মি – মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন

চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপর মোটামুটি ধারনা রয়েছে, এমন যে কেউ খুব ভালো করেই জ্ঞাত আছেন যে, বর্তমানে পশ্চিমাদের মন-মানসিকতায় আপন ধর্ম ও সভ্যতা-সংস্কৃতি অধঃপতনের নেপথ্য কারণ রূপে যে ধর্ম ও জাতির ব্যাপারে চরম ভয় ও আশঙ্কা কাজ করছে- তাহলো ইসলাম ও মুসলমান। কারণ, ইসলাম শ^াশ^ত ও আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। অন্যান্য সকল ধর্ম ও মতবাদকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছে আবির্ভাবের দিন থেকেই। কিয়ামত পর্যন্ত এ পৃথিবীতে যত মানুষের আগমন ঘটবে, তাদের প্রত্যেকের ইসলাম অনুযায়ী নিজের জীবন গঠন ও রাসূলের সা. ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআন কারীমের অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য।
যারা কট্টর অন্য কোন ধর্মাবলম্বী বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রবক্তা, তারা তাদের সমস্ত শক্তি-সামর্থ্য, সৈন্য-সামন্ত, অত্যাধুনিক ও বস্তুবাদী প্রতিটি মাধ্যম আজ ইসলাম ও মুসলমানের অগ্রগামিতা প্রতিরোধে খাটাচ্ছে। তারা ইসলামকে সেকেলে ও পশ্চাতমুখি ধর্ম আখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর নগরে-প্রান্তরে ইসলাম ফোবিয়া ছড়াচ্ছে। তবু ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারীরা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের কন্দরে কন্দরে পৌঁছে দিতে চায় ইসলামের সুমহান বার্তা। জানিয়ে দিতে চায়- ইসলাম মানবতার ধর্ম, শান্তি ও সমৃদ্ধির ধর্ম এবং সমগ্র বিশে^র নিয়ন্তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা। আরও জানান দিতে চায় যে- জীবন চলার পথে মানুষ পদে পদে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয় তার যথাপোযুক্ত সমাধান রয়েছে ইসলামে। মানবতা বিরোধী ও আল্লাহ্তা‘আলার অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কিছুকেউ ইসলাম সমর্থন করে না। উপরন্তু তা ইসলামের অনুসারীদের জন্যে নিষিদ্ধ। প্রতিনিয়ত ইসলাম সকলকে অনৈতিক ও অমানবিক কাজ-কর্ম থেকে দূরে থাকার প্রেরণা যোগায়।
পশ্চিমা জাতি-গোষ্ঠি যতোই ইসলাম বিরোধী হোক, তারা যতোই ইসলামফোবিয়া সৃষ্টি করুক, ইসলামকিন্তু আপন মহিমা-মাধুর্য ও আল্লাহর কুদরতি ফায়সালায় ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-দেশান্তরে। পাহাড়-গিরি, মরু-কান্তারে। তৃষ্ণা নিবারণ করছে লাখো-কোটি তৃষিত হৃদয়ের। ষড়যন্ত্রের বিচিত্র ও অভিনব পদ্ধতি কিছুই—থামাতে পারি নি, পারছে না ইসলামের অভিযাত্রা।
অপরপক্ষে ইসলামবিদ্বেষী বা অমুসলিমরা যখনই ইসলাম নিয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়েছে; ইসলাম সম্মন্ধে মোটামুটি ধারণা লাভের চেষ্টা করেছে,তখনই তাদের অধিকাংশ জন ইলামের সুমহান আদর্শে মোহিত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। এর বাস্তব প্রমাণ অসংখ্য ও অগণিত। আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে- কুন্ঠচিত্তে হলেও স্বয়ং কিছু পশ্চিমা মিডিয়া সাক্ষ্য দিচ্ছে ইদানিং। ক্রমে প্রতিটি ব্যাক্তির কাছে এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হচ্ছে, ইসলামে অপার কুদরতী মোহ ও অলৌকিক আকর্ষনশক্তি রয়েছে। ইসলামের বিরোধিতা করে কেউ ইসলামের প্রচার-প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। উল্টো হিতে বিপরিত হয়।ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামকে কলুষিত করার যেরূপ হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামের পরিধিও তদরূপ বিস্তৃতি ও পরিব্যাপ্তি লাভ করছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন- ‘তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহ্র আলো নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তাঁর আলোর পূর্ণতা দান করবেন—যদিও তা কাফেরদের কাছে অপ্রীতিকর ঠেকে। (সুরা তাওবা- ৩২)
নিম্মে পশ্চিমা মিডিয়ার তৈরী বিস্ময় সৃষ্টিকারী কিছু রিপোর্ট উল্লেখ করা হলো-
আমেরিকার নিউজ চ্যানেল ‘সিএনএন’ (ঈঘঘ) এর রিপোর্ট অনুযায়ী পুরো বিশে^ অতি দ্রুত ও ব্যাপকতার সাথে প্রচার-প্রসার হওয়া ধর্মের স্বীকৃতি পেয়েছে ইসলাম।‘এনবিসি’(ঘইঈ)রিপোর্ট দিয়েছে, বিশ হাজার আমেরিকান নারী-পুরুষ প্রতি বছর ইসলাম গ্রহন করছে। ‘সিএনএস নিউজ’(ঈঘঝ ঘবংি) তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইটে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে- ইসলাম ইউরোপে অতিসত্ত্বর সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মে পরিণত হতে চলছে। আরো বলা হয়েছে- জুমার নামাযে অংশগ্রহনকারী মুসলমানদের সংখ্যা আগামী ৩৫ বছর পরেরবিবার চার্চে উপাসনা করতে আসা খৃস্টানদের চেয়ে দিগুণে দাঁড়াবে এবং ২০৪৬ সালে জার্মানীতে ইসলাম বৃহত্তর ধর্মগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। উল্লেখ্য, কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন- ‘বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম দেশের অভিবাসন প্রত্যাশী হাজার হাজার নারী-পুরুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো দ্বারা মনে হয় আগামী একশ বছর পর ইউরোপ মুসলিম মহাদেশে পরিণত হতে চলেছে।’এটি অবশ্য তাদের ব্যাক্তিগত মতামত। তবু ফেলা দেয়ার মতো কথা নয়।
‘সিএনএস নিউজ’রনিবন্ধটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- ফ্রান্সে গত শতাব্দীতে চার্চের তুলনায় মসজিদই নির্মিত হয়েছে অধিক। বৃটেনের একটি সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য হেরাল্ড’ (ঞযব ঐবৎধষফ) লিখেছে- ‘ইউরোপে হাজার হাজার অমুসলিম নাগরিক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।’তারা আরো লিখেছে- ‘বৃটেনের বিখ্যাত শহর গ্লাসগোতে মুসলমানদের জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। প্রতি বছর দু‘ শত থেকে পাঁচশত লোক ইসলাম গ্রহন করছে। বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, গত বছর চার হাজার জার্মান নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহন করেছে।’
আশ্চর্যের কথা হলো, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ইসলাম গ্রহনকারী অধিকাংশই নারী। যুক্তরাজ্যের ম্যাগাজিন ‘টাইমস্’(ঞরসবং)জানিয়েছে- ‘আমেরিকান পুরুষদের তুলনায় আমেরিকান নারীরা চারগুণ অধিক হারে ইসলাম গ্রহন করছে। সুইজারল্যান্ডে গত কয়েক বছরে ত্রিশ হাজার নারী ইসলাম গ্রহন করেছে।’
প্রতি বছর পাঁচ হাজার বৃটিশ নাগরিক ইসলাম গ্রহন করছে :
একটি জরিপের মাধ্যমে জানা গেছে- বিগত কয়েক বছরে যে পরিমাণ বৃটিশ নাগরিক ইসলাম গ্রহন করেছে, গত বছর তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ ইসলাম গ্রহন করেছে। একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে- ‘গত দশ বছরে এক লক্ষ বৃটিশ নাগরিক ইসলাম গ্রহন করেছে এবং প্রতি বছর তাদের পাঁচ হাজারের উর্দ্ধে লোক ইসলাম গ্রহন করছে।’
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে- ‘গত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যে পাঁচ হাজার দু‘শ বৃটিশ নাগরিক ইসলাম গ্রহন করেছে। যেখানে লন্ডনে ইসলাম গ্রহনকারীর সংখ্যা এক হাজার চার শত জন। যুক্তরাজ্যের স্থানী জনগণ, পুলিশ স্টেশন ও মসজিদগুলোর উপর একটি জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে বিগত দশ বছরে ইসলাম খুব ব্যাপক হারে প্রসারতা লাভ করেছে।’
রিপোর্টের মাধ্যমে আরো জানা গেছে- বিগত ছয় বছরে বৃটেনে মুসলমানের সংখ্যা ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মসজিদের সংখ্যা ১৫০০ পেরিয়ে গেছে। বৃটেনের প্রশাসন জানিয়েছে, খৃস্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহনকারীরা ছাড়াও প্রায় কোটি খানেক ধর্মনিরপেক্ষ বৃটিশ নাগরিক ক্রমান্বয়ে ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে- ‘যুক্তরাজ্যের কারগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ কয়েদী ইসলাম গ্রহন করছে। অনুরূপভাবে স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেও ইসলামের প্রচারনা হচ্ছে খুব জোরেশোরে। এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠছে।
বৃটেনের একজন প্রতাপশালী সচিব জানিয়েছেন- ‘বৃটেনে খৃস্টানদের চার্চগুলো বন্ধ হওয়া ও মানুষের নৈতিকতা শূন্যতার পরিপূরক হতে পারেকেবল ইসলামই।’ একটি রিপোর্টে তো শিরোনামই দেয়া হয়েছে- ‘গ্রেট বৃটেনে ইসলামের ব্যাপক প্রসারতা’। প্যারিস, রোম ও লন্ডনে মসজিদের সংখ্যা চার্চের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারগুলোতে কুরআনের অনূদিত কপি সমূহ সবচে’ বেশি বিক্রি হওয়া গ্রন্থের লিষ্টে গন্য হচ্ছে। সেখানকার কারাগারগুলোতেও খুব জোরেশোরে ইসলামের প্রচার হচ্ছে। বিভিন্ন কারাগারে কয়েদিদের অনেক বড় অংশ ইসলাম গ্রহন করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওয়েল্স এবং অন্যান্য অঞ্চলসমূহে খুব দ্রুত বিস্তারকারী ধর্মের স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলাম।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে এবং মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে ইসলাম ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মে পরিণত হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, ২০০১ সালে ইংল্যান্ডে খৃস্টান্দের সংখ্যা ছিলো শতকরা ৭২ শতাংশ, কিন্তু ২০১১ তে এসে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশে।
২০১০ সালে ‘সিএনএন’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, পাশ্চাত্যে ইসলাম গ্রহনকারীদের সংখ্যা বহুগুণে বেশি এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েই চলছে। বিগত ১২ বছরে আমেরিকায় ১২ শ’র উর্দ্ধে মসজিদ নির্মিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর ১০০ করে মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। ঐ রিপোর্টিতে আরো উল্লেখ রয়েছে, নওমুসলিমগণ পুরেপুরি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর এবং যাবতীয় প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের পর ইসলাম ধর্ম প্রচারে আতœনিয়োগ করছে।
বস্তুত, সকল যড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রোধ করে ইসলাম মানবতার দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। যদিও বর্তমানে কিছু কিছুঅঞ্চলে ইসলাম ও মুসলমানের দুর্দিন যাচ্ছে। প্রাচ্যের কবি ড. আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল সুন্দর বলেছেন- ‘ইসলাম হলো নাগরদোলার মত। একপাশ নুয়ে পড়বে তো অন্য পাশ উতরে উঠবে। এক দিকে ইসলামের অধঃনমন হবে তো অন্য দিকে ইসলাম জেগে ওঠবে সময়ের তালে তালে।’
** কুয়েত থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আল-মুজতামা’ এবং ভারতের দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা থেকে প্রকাশিত মাসিক আরবী ম্যাগাজিন ‘আল-বাসুল ইসলামী’ অবলম্বনে রচিত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ