জামায়াত-বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর উপদলীয় বিরোধে বিপর্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা। জেলার ছটি আসনেই বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় কয়েকজন করে নেতা। ফলে এক একটি আসনে তৈরি হয়েছে কয়েকটি গ্রুপ। এতে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যেন ঘরের শত্রু বিভীষণ!
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও কড়া সমালোচনা করছেন একে অপরের। ভোটের আগে এসব বিরোধ মেটাতে না পারলে এ জেলায় দলটির ভরাডুবি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বিএনপি শক্ত অবস্থানে থাকলেও আদালতে সুরাহা না হলে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাবে না। সেক্ষেত্রে আর দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনও করতে পারবে না। সেখানে তারা স্বতন্ত্র হিসেবে অন্য প্রতীক নিয়ে অথবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী জেলার আয়তন ২,৪৮৩.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ের হালনাগাদ হিসাবে, এ জেলায় ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৮। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৭ হাজার ৯০০ জন এবং নারী ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬০ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের আছে ১৮ জন।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী)
কৃষিনির্ভর বরেন্দ্র অঞ্চল তানোর-গোদাগাড়ী নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন রাজশাহী-১। এটি জাতীয় সংসদের ৫২তম আসন। আয়তনে তানোর ২৯৫.৪০ বর্গকিলোমিটার এবং গোদাগাড়ী ৪৭৫.২৬ বর্গকিলোমিটার। তানোরে পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ১৪৩ জন এবং নারী ভোটার ৯০ হাজার ৮৭০ জন। গোদাগাড়ী উপজেলায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৭০ জন।
জামায়াত-বিএনপির এ দুর্গে একক আধিপত্য ছিল বিএনপির। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ওমর ফারুক চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলটি পরপর তিনবার বিজয়ী হলেও এবার অবশ্য চলছে প্রকাশ্য কোন্দল। বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন অনেক নেতা। এ আসনে এর আগে বিএনপির একাধিকবার জয়ী ব্যারিস্টার আমিনুল হক সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেন। আসনটিতে নির্বাচন করতে মুখিয়ে আছেন এ দলের বেশ কয়েকজন নেতা। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিএনপির ভালো ইমেজের প্রার্থী সংকটে, সুযোগের অপেক্ষায় আছে জাতীয় পার্টি।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য
রাজশাহী-১ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের মইন উদ্দীন আহমদ। ১৯৭৯ সালে দখলে নেয় বিএনপির শাহজাহান মিয়া। সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর মুজিবুর রহমান জয়ী হন। ১৯৮৮ সালে দুরুল হুদা পরে পরপর ৩ বার ১৯৯১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬, ১৯৯৬, ও ২০০১ সালে জয়ী হন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমিনুল হক। ২০০৮ সালে বিএনপির ই দুর্গে হানা দেয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনবার জয়ী হন।
ওমর ফারুক চৌধুরী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জঙ্গিবাদের মদদ দাতা হিসেবে অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হককে পরাজিত করেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। আমিনুল হকের মৃত্যু পর তার ভাই সেনা কর্মকর্তা ও স্থানীয় এক শিল্পপতি দ্বাদশ নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থী হতে প্রচারণা শুরু করেছেন।
রাজশাহী-২ (সদর আসন)
বিভাগীয় এ শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদর আসন রাজশাহী-২। এ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তবে এবার আওয়ামী লীগ নেতারাও মনোনয়ন চাইতে পারে এমন গুঞ্জন আছে রাজনীতির মাঠে। এছাড়া রয়েছে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলেও বিএনপিতে প্রার্থী নিয়ে রয়েছে বড় রকমের দ্বন্দ্ব।
রাজশাহী-২ আসনটি বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, মতিহার ও শাহমখদুম থানা এলাকা নিয়ে। এটি জাতীয় সংসদের ৫৩তম আসন। এর আয়তন ১০৪.০৬ বর্গকিলোমিটার। আসনটি মূলত রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত। বোয়ালিয়া এলাকায় মোট ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৬ হাজার ৩২৭ ও নারী ১ লাখ ৩৯৮ জন। রাজপাড়া এলাকায় মোট ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৮ হাজার ২৭৪ ও নারী ৫৯ হাজার ৮৫৮ জন। মতিহার এলাকায় মোট ভোটার ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৪ হাজার ৩৯১ ও নারী ২৪,০৬৮ জন। শাহমখদুম এলাকায় মোট ভোটার ২৩ হাজার ৪৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১,৪৭৭ ও নারী ১১, ৯৬১ জন।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ আসনটি ছিল বিএনপির। ২০০৮ সালে মহাজোটের হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির জয়লাভে ক্ষমতাসীনরা আসনটি দখলে নেয়। পরপর তিনবার জয়ী হন ফজলে হোসেন বাদশা। জোটের প্রার্থী হিসেবে আবারো আলোচনায় আছেন তিনি। এ আসনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মুখিয়ে আছেন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য। বিএনপি আন্দোলনের কথা বললেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসহ দলের অনেক নেতা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জনগণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। তবে বিএনপিতে প্রার্থিতা নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের অন্তঃকলহ।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য
রাজশাহী-২ আসনে (বোয়ালিয়া-পবা) ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালেদ আলী মিঞা জয়ী হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে আসনটি দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। সংসদ সদস্য হন মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। ১৯৯১ সালে আবারো জয় ছিনিয়ে নেয় বিএনপি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পর পর দুই নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির কবির হোসেন। ২০০১ সালে জয়ী হন বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। ২০০৮ সালে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা এ আসনের সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৩ সাল থেকে (বোয়ালিয়া-পবা) নামে রাজশাহীর সংসদীয় এ আসনটি ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাসে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে একটি আসন হওয়ায় পবা উপজেলা বাদ পড়ে।
রাজশাহী -৩ আসন (পবা-মোহনপুর)
রাজশাহী মহানগর ঘেঁষা পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন রাজশাহী-৩। গেল তিন মেয়াদে এ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের টিকিট নিতে এ আসনে বহিরাগত হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী জনসংযোগ এবং মিছিল-মিটিং করছেন।
রাজশাহী-৩ মূলত জাতীয় সংসদের ৫৪তম আসন। আয়তনে পবা ৩৪০.০৩ বর্গকিলোমিটার এবং মোহনপুর ১৬২.৬৫ বর্গকিলোমিটার। পবা উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫৬ এবং নারী ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৪ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের তিন জন। মোহনপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ০৫৭ এবং নারী ৮৭ হাজার ০৭২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের একজন।
১৯৭৩ সাল থেকে এ আসনে সমান সংখ্যক ৪ বার করে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। দুবার জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। একবার জিতেছে ন্যাপ। ২০০৮ সালের পর থেকে এ আসন আওয়ামী লীগের। পরপর ৩ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন আয়েন উদ্দিন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির রুহুল কবীর রিজভী থেকে শুরু করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের নাম আলোচনায়। অন্তঃকলহে দুদলের ডজন খানেক প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। দল গোছাচ্ছে জাতীয় পার্টিও।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য
এ আসনে (মোহনপুর-বাগমারা ) ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেসবাহুল হক জয়ী হন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির এহসান আলী খান এমপি হন। ১৯৮৬ সালে ন্যাপের প্রার্থী সরদার আমজাদ হোসেন জয়ী হন। পরে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) থেকে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। পরের দুই নির্বাচনে আসনটি হয় জাতীয় পার্টির। ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আমজাদ হোসেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে বিএনপির মুহম্মদ আবদুল গফুর জয়ী হলেও ওই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবু হেনা এমপি হন।
২০০১ সালের নির্বাচনেও এ আসন থাকে বিএনপির আবু হেনার দখলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য হন মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরপর দুবার জয়ী হয়ে আয়েন উদ্দিন এ আসন রাখেন আওয়ামী লীগের দখলে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন।
১৯৭৩ সাল থেকে (বোয়ালিয়-পবা) নামে রাজশাহী সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাসে পবা মোহনপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়।
রাজশাহী-৪ আসন (বাগমারা)
রাজশাহী-৪ আসনটি বাগমারা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫৫তম আসন। এর মোট আয়তন ৩৬৬.২৬ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৩ এবং নারী ১ লাখ ৬৮ হাজার ১২৯ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের আছে ৩ জন।
জঙ্গি ও চরমপন্থি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত বাগমারা। একসময় বাংলা ভাই ছাড়াও সর্বহারার অভয়ারণ্য ছিল এলাকাটি। তবে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সে চিত্র আর নেই।
১৯৭৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগ জিতেছে ৫ বার, বিএনপি চারবার। ২০০৮ সাল থেকে একাধারে তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন পেতে প্রচারণার মাঠে এনামুল হকসহ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন ফাইভ স্টার গ্রুপ খ্যাত আওয়ামী লীগের নেতারা। বসে নেই বিএনপির প্রার্থীরাও। সরকার বিরোধী আন্দোলনের ফাঁকে একাধিক নেতা রয়েছেন মনোনয়নের প্রত্যাশায়। চালাচ্ছেন কৌশলী প্রচারণা।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য
এ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ সদস্য হন। ১৯৭৯ সালে সাংসদ হন বিএনপির এমএ সালাম চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের আয়েন উদ্দিন সংসদ সদস্য হন। এর আগে এ মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলার সাথে যুক্ত হয়ে সংসদীয় আসনের নাম ছিল (মোহনপুর-বাগমারা)। ২০০৮ সালে এ আসনটি দখলে আসে আওয়ামী লীগের। সংসদ সদস্য হন এনামুল হক। সেই থেকে পর পর তিনবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য হন তিনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাবেক সাংসদ আবু হেনাকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের এনামুল হক। ২০২০ সালে করোনায় আবু হেনা মারা যাওয়ার পর একাধিক বিএনপি নেতা মনোনয়ন পেতে মরিয়া।
১৯৭৩ সাল থেকে (মোহনপুর- বাগমারা) রাজশাহী-৪ সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাসে বাগমারা একটি উপজেলা একটি সংসদীয় আসন হয়।
রাজশাহী-৫ আসন (পুঠিয়া-দুর্গাপুর)
রাজশাহী-৫ আসনটি পুঠিয়া-দুর্গাপুর নিয়ে। এটি জাতীয় সংসদের ৫৬তম আসন। আয়তনে পুঠিয়া ১৯২.৬৩ বর্গকিলোমিটার এবং দুর্গাপুর ১৯৭.৮৯ বর্গকিলোমিটার। পুঠিয়া উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৯ হাজার ৪৬৩ এবং নারী ৯৫ হাজার ৭০৩ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের তিনজন। দুর্গাপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৭ হাজার ৬৪৪ এবং নারী ৮৫ হাজার ৭৬৪ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের একজন।
এ আসনে ৬ বার জয়ী হয়েছে বিএনপি। আর ২০০৮ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা দুদফায় এমপি থাকলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন ডা. মনসুর রহমান। বর্তমানে রাজশাহীর এ আসনে সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুভাগে বিভক্ত। বিএনপিতেও রয়েছে প্রকাশ্য কোন্দল। জাতীয় পার্টি সক্রিয় হচ্ছে রাজনৈতিক মাঠে। দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন রাজনৈতিক দলগুলো।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য
এ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সরদার মো. জাহাঙ্গীর সংসদ সদস্য হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির মোখলেছুর রহমান চৌধুরী জয়ী হন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন জয়ী হন। ১৯৯১ সালে এ আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য হন তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির আবদুস সাত্তার মণ্ডল জয়ী হলেও একই বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির নাদিম মোস্তফা। তিনি পর পর দুবার অর্থাৎ ২০০১ সালেও জয়ী হন। ২০০৮ সালে আসনটির দখল নেয় আওয়ামী লীগ।
২০০৮ ও ২০১৪ সালে এমপি হন আব্দুল ওয়াদুদ। ২০১৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান বিজয়ী হন।
রাজশাহী-৬ আসন (বাঘা-চারঘাট)
পদ্মার তীর ঘেঁষা বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসন। বড় দুই দলের একচ্ছত্র আধিপত্য নেই এখানে। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দুটি উপ-নির্বাচনসহ ছটি সংসদীয় নির্বাচনে তিনবার আওয়ামী লীগ ও তিনবার বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
এটি জাতীয় সংসদের ৫৭তম আসন। আয়তনে চারঘাট ১৬৪.৫০ বর্গকিলোমিটার এবং বাঘা ১৮৫.১৬ বর্গকিলোমিটার। চারঘাট উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৬৯ এবং নারী ৯৬ হাজার ৯৪৮ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের একজন। বাঘা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯১ হাজার ৯২ এবং নারী ৮৮ হাজার ৬৪৫ জন।
বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার প্রার্থিতার ব্যাপারে অনেকটা নির্ভার হলেও নিজ দলেই রয়েছে চরম গ্রুপিং। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুপক্ষে বিভক্ত। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে কারাগারে থাকা জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদও শক্ত প্রার্থী। তবে একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দুই বড় রাজনৈতিক দলের কর্মীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নির্বাচিত সংসদ সদস্য
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আতোয়ার রহমান তালুকদার এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে জয়ী হন বিএনপির মোহাম্মদ মকবুল হোসেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির নুরুন নবী চাঁদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি আসনটি ফিরে পান। এমপি হন বিএনপির আজিজুর রহমান। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি।
একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির আলাউদ্দিন সংসদ সদস্য হন। ১৯৯৮ সালে আলাউদ্দিন প্রতিমন্ত্রী হন। এতে বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে এবং নির্বাচন কমিশন তার আসন খালি ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালে এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আলাউদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। পরের বছর ২০০০ সালে উপ-নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের রায়হানুল হক সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালে এ আসনে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী কবির হোসেন।
আর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনি জয়ী হন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন। বর্তমানে চাঁদ জেলে থাকায় তার অনুসারীরা দলীয় কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। থেমে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও।
























