[english_date]

রংপুরে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি, দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রংপুরে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। দলীয় সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও টং দোকানে চায়ের আড্ডায় নিজেদের নানাভাবে তুলে ধরছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর জাতীয় পার্টির দুর্গ খ্যাত রংপুরে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও কম। এদিকে, অন্য দলের মতো সেভাবে এখনো মাঠে নামেননি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় সরকারের অধীনে শেষ পর্যন্ত দল নির্বাচনে যাবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তারা।

জানা গেছে, রংপুরে সংসদীয় আসন ৬টি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া)

তিস্তাবেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসন। জাতীয় ভোটে জোটের সমীকরণে বারবারই রাজনৈতিক ফায়দা লাভের বলি হয়েছে গঙ্গাচড়ার মানুষ। স্বাধীনতার পর এ আসনটিতে কখনোই স্থানীয় প্রার্থীদের মনোনীত করেনি রাজনৈতিক দলগুলো। কখনো জোটের স্বার্থ আবার কখনো বা ভোটের সমীকরণে বিকশিত হয়নি গঙ্গাচড়ার নেতৃত্ব।

টানা তিন মেয়াদে আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা। যদিও এবার এইচ এম এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে প্রাথমিভাবে মনোনীত করেছে জাতীয় পার্টি।

তবে এবার আসনটি নিজেদের দখলে নিতে একাট্টা ক্ষমতাসীন দল। এরই মধ্যে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কাজের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু মনোনয়নের লাভের দিকে এগিয়ে আছেন। আর ভোটে গেলে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হবেন গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান। এই আসনের মোট ভোটার দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৪ জন।

রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ)
তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ উপজেলা ও বদরগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে গঠিত রংপুর-২ আসন। ১৯৯১ সাল থেকে আসনটিতে তিনবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে। সর্বশেষ পরিবর্তনের পালে হাওয়া লেগেছে গেল একদশকে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত আসনটির দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। দীর্ঘ সময় উন্নয়ন বঞ্চিত জনপদটির পুরো অবয়ব বদলে গেছে গত এক দশকে।

আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু মনোনয়ন প্রার্থী। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে আনিস মণ্ডল অথবা সাবলু চৌধুরী এবং বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার নির্বাচন করতে পারেন। নাগরিক ভোগান্তি নিরসন, ভারি শিল্প কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ যুগোপযোগী উন্নয়নের আশায় আসন্ন নির্বাচনে আবারো জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন এ আসনের তিন লাখ ১২ হাজার ৮১৫ ভোটার।

রংপুর-৩ (সদর-সিটি করপোরেশন)
রংপুর সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন। বিভাগীয় শহরের নির্বাচনী এলাকা হিসেবে আসনটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। ১৯৯১ পরবর্তী আসনটি টানা জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও এলাকার কোনো উন্নয়নই হয়নি নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মাধ্যমে। এমন কী ভোটাররাও চেনেন না তাদের এমপিকে। ফলে সিটির অংশ ছাড়া এ আসনের পুরোটাই প্রায় অন্ধকারে!

এ আসনে বেশির ভাগ সময় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। ২০১৮ সালে তার মৃত্যুর পর রংপুর ১ আসনের এমপি নির্বাচিত হন এরশাদ পুত্র রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর খুব একটা নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায় না তাকে। যদিও এবার এ আসন থেকে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন অনেক আগেই।

তবে আসন্ন নির্বাচনে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কাজের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মাঠ নেমেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলসহ আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন চাইবেন দলের মহানগর আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, যুগ্ম আহবায়ক রিটা রহমান ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাওসার জামান বাবলা।

মূল শহর, বিভাগীয় সদর দফতর, বেতার উপকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা রংপুর-৩ আসনে থাকায় অবকাঠামোগত উন্নত মনে হলেও আসলে অবহেলা আর বঞ্চনার শেষ নেই। দুঃখ ঘোচাতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন চার লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ ভোটার।

রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা)

কাউনিয়া-পীরগাছা উপজেলা ও হারাগাছ পৌরসভা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসন। ২০০৮ সাল থেকে রংপুর-৪ আসনে টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি। একাদশ জাতীয় সংসদে পেয়েছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এ আসনটিতে এখনো মানুষের জীবনমানে আসেনি পরিবর্তন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নয়ন হলেও তিস্তার করাল গ্রাস, শিল্প, গ্রামীণ অবকাঠামো সব কিছুরই বেহাল অবস্থা। আসন্ন নির্বাচনে আসনটি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনারুল ইসলাম মায়া ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ।

এদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে মাহবুবার রহমান মাহবুবকে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা অথবা আফসার আলীর নির্বাচন করার কথা রয়েছে।

কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলটিতে পণ্য সংরক্ষণাগার, শিল্পায়ন, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন চার লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ ভোটার।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর)
মিঠাপুকুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৫ আসন। এতে ১৯৯১ থেকে দুবার জাতীয় পার্টি ও চারবার জয় পায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান। এ এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সব কিছুরই বেহাল অবস্থা। একই সঙ্গে মিঠাপুকুর আওয়ামী লীগে বিভক্তি, চরম কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তারপরও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার।

বিএনপি থেকে কারও নাম শোনা না গেলেও জাতীয় পার্টির হয়ে এরশাদ পরিবার থেকে যে কেউ নির্বাচন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

বৃহত্তর মিঠাপুকুর উপজেলা তথা রংপুর-৫ আসনের মোট ভোটার তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪১৪ জন।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ)
ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্মভূমি পীরগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসন। ১৯৮৬ থেকে ২০০৬ দীর্ঘ সময় এরশাদ আবেগে ভর করে রংপুর-৬ আসনে জয় পায় জাতীয় পার্টি। কিন্তু এতে গতি পায়নি এলাকাবাসীর ভাগ্যের চাকা। ২০০৮ সালে শ্বশুরবাড়ির আসনটিতে নির্বাচন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ক্ষমতাসীনদের দখলে আছে রংপুর-৬ আসন। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটসহ প্রায় সব খাতে হয়েছে দৃশ্যমান উন্নয়ন। গ্রাম হবে শহর – এ স্লোগানের মডেলও হয়েছে এলাকাটি। পাল্টে গেছে মানুষের জীবনমান। আসনটি থেকে বর্তমান সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

রংপুর-৬ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৯২ হাজার ৯৯৭ জন। উন্নয়ন ও পরিবর্তনে বাসিন্দারা তুষ্ট থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো খুব একটা তোড়জোড় নেই ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ