[english_date]

বিএনপির কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ, বাড়ছে পদোন্নতি প্রত্যাশীদের ভিড়

[ad id=”28167″]

বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রস্তুতি প্রস্তুতি শেষ। প্রস্তুতি উপকমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয়, কাজের তদারকের পাশাপাশি নেতাদের অংশ নিতে হচ্ছে একের পর এক বৈঠকে। দিনভর কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততার পর বিশ্রামের ফুরসৎ মিলছে না মধ্যরাত অবধি। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে পদ-পদবী ও পদোন্নতি প্রত্যাশীদের ভিড় জমছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায়।

এদিকে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে এক ডজন বই প্রকাশ করছে বিএনপি। জোরেশোরেই চলছে সে প্রকাশনা কাজ। বিএনপি ও ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষে থেকে আলাদা স্লোগানে ছাপা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ পোস্টার। শুক্রবার থেকে রাজধানীতে পোস্টারিংসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। নিরাপত্তায় থাকছে ১০০ সিসিটিভি ক্যামেরা, ১০টি আর্চওয়ে, ৪০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। চাওয়া হয়েছে পুলিশের সহযোগিতাও। কাউন্সিলরদের জন্য মোরগ পোলাওয়ের অর্ডার দেয়া হয়েছে ১০ প্রতিষ্ঠানে। চিকিৎসার সেবায় থাকছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি টিম। রিহার্সাল চলছে দেড় ঘণ্টা দৈর্ঘের সাংস্কৃতিক পর্বের। কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত বিভিন্ন উপকমিটির আহ্বায়করা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সেবা ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব মেজর (অব.) মিজানুর রহমান জানান, ১৯শে মার্চ কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে আগের দিন ১৮ই মার্চ থেকে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করবে সেবা ও শৃঙ্খলা উপকমিটি। সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়ে পরিকল্পনা ও পরামর্শের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও অঙ্গদলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ১০৫ সদস্যের কমিটি এ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে। তবে কাউন্সিলে সেবা ও শৃঙ্খলা দায়িত্ব পালন করবেন ছাত্রদল-যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ৪০০ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।

মেজর (অব.) মিজান জানান, হাইকোর্ট থেকে মৎস্যভবন, শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ কাউন্সিল ভেন্যুতে ১০০ সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সার্বক্ষণিকভাবে পুরো এলাকার চিত্র মনিটর করা হবে। তিনি জানান, অন্তত ১০টি আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে। কাউন্সিলে আমন্ত্রিত কোনও লোকই আর্চওয়ে ছাড়া ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে থাকবে অর্ধশতাধিক মেটাল ডিটেক্টর। এছাড়া ১০ সদস্য বিশিষ্ট ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে ওয়াকিটকি হাতে। বিশেষ প্রয়োজনে তারা দায়িত্বপালন করবেন।

তিনি জানান, সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দুটি সহযোগিতা চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গতকাল ভেন্যু পরিদর্শন করেছে দলের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

কাউন্সিলের আপ্যায়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারীদের আপ্যায়নের জন্য তার নেতৃত্বাধীন উপকমিটি ইতিমধ্যে ১৯টি টিম গঠন করেছে। সেসব টিমের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকসহ তাদের প্রতিনিধিদের সমন্বয় করা হচ্ছে। কাউন্সিলে খাবারের বিষয়টি এই টিমগুলো জেলা কমিটির প্রতিনিধির সঙ্গে মিলে দেখভাল করবেন। গতকাল টিমগুলোকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়।

তিনি জানান, এবারের কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারীদের মোরগ-পোলাও দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে ১০টি আলাদা জায়গায় খাবারের জন্য বুকিংও দেয়া হয়েছে। খাবার পরিবেশনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ ব্যবহারের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আবদুস সালাম বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে কাউন্সিলে ১৫ হাজারের মতো লোক অংশগ্রহণ করবেন।

এদিকে শুক্রবার থেকে কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করছে বিএনপি। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পোস্টার, দেয়াল লিখন, লাইটিং করার অনুমতি নেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশিত পোস্টারগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গতকাল থেকেই পাঠানো শুরু হয়েছে সে পোস্টার। জেলা কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করছেন সেসব পোস্টার। এ ছাড়া কেন্দ্রের ডিজাইন করা পোস্টারগুলো নিজেদের মতো সংখ্যায় প্রকাশ করবে দলের বিভাগীয় কমিটি।

সাংস্কৃতিক উপকমিটির সদস্য ও জাসাসের সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান জানান, কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্বের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে দেড় ঘণ্টা দৈর্ঘের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। সেখানে ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ শীর্ষক থিম সংটি গাইবেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান ও রিজিয়া পারভীন।

বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও উপকমিটির আহ্বায়ক গাজী মাযহারুল আনোয়ারের লেখা গানটির সুর করেছেন আহমেদ কিসলু। আন্দোলন ও গণমুখী গান, চিত্রনাট্য, নাচের সমন্বয়ে পুরো পর্বটি হবে রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী। এছাড়া জাতীয় ও দলীয় সংগীতসহ পুরো পর্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান শিল্পী। একইভাবে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিদিনই ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত ১১টি উপকমিটি।

দপ্তর সূত্র জানায়, আগামী ১৬ই মার্চ থেকে কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ শুরু হবে। কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত দপ্তর ও যোগাযোগ উপকমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ জানান, প্রতিটি উপকমিটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমন্বয়ের কাজ করছে দপ্তর ও যোগাযোগ উপকমিটি। প্রতিটি উপকমিটির প্রয়োজনে তাদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ, যোগাযোগ এবং সভার স্থান ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করছে তারা। কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও দেশি-বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের দাওয়াত পাঠানোর কাজও সংশ্লিষ্ট উপকমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।

এদিকে শুক্রবার কাউন্সিল প্রস্তুতি উপকমিটির একাধিক সদস্য জানান, নানা নাটকীয়তার পর যে হলটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার আসন সংখ্যার চেয়ে বিএনপির কাউন্সিলরই আছে প্রায় চারগুণ। কিন্তু এ অপ্রতুলতার মধ্যেও আমাদের কাউন্সিল করতে হবে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কাউন্সিলের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রুদ্ধদ্বার পর্বে কেবল কাউন্সিলররাই অংশ নেন। সেখানে দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অনুমোদন ও নতুন পথনির্দেশনা চূড়ান্ত হয়। যেখানে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেবেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত ভেন্যুতে সকল কাউন্সিলরকে বসানো সম্ভব হবে না।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি যে মিলনায়তন বরাদ্দ পেয়েছে তার আসন সংখ্যা ৮৩০। বরাদ্দের বাইরে অন্য হল ব্যবহার করতে দেয়ার কোনও সুযোগ নেই। ফলে আসন সংকট নিয়ে একধরনের ভোগান্তি পোহাতে হবে কাউন্সিলরদের। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে কাউন্সিল নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না বিএনপির। দলের একাধিক সিনিয়র নেতা এবং কাউন্সিলের প্রস্তুতির জন্য গঠিত উপকমিটির আহ্বায়করা এ দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।

কাউন্সিলের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির কাউন্সিলে যে পরিমাণ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের উপস্থিতি ঘটবে তার জন্য বড় ভেন্যুর প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যে ভেন্যুর অনুমতি পেয়েছি তা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় এক দশমাংশ বলা যায়। আমাদের প্রচেষ্টার কোন কমতি নেই, কিন্তু এখনও জানি না সফল ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা রাখতে পারবো কিনা।

এদিকে শুক্রবার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে কাউন্সিলের পোস্টারিং শুরু করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় ইউনিটগুলো। কাউন্সিল উপলক্ষে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলা ফেসবুক পেজটিতে কাউন্সিলের বিভিন্ন প্রস্তুতির তথ্য ও ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। পেজটিকে লাইক দেয়ার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এছাড়াও ইউটিউব ও টুইটারসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমকেও ব্যবহার করা হচ্ছে প্রচারণায়।

কাউন্সিলের প্রকাশনা বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, আসন্ন কাউন্সিলে প্রকাশনা উপকমিটি অন্তত একডজন বই ও সুভ্যেনির প্রকাশ করবে। তার মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্ম, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন ও কর্ম, বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস, রাষ্ট্রপরিচালনায় বিএনপির অবদান, বিএনপির আদর্শ-রাজনীতি ও নেতৃত্ব নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মূল্যায়ন নিয়ে এসব বই প্রকাশ করা হবে। বিগত ৮ বছরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেয়া ভাষণের সংকলন, বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের গুম-খুন-নির্যাতন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠন নিয়ে কয়েকটি প্রকাশনা থাকবে। রাজনীতি গবেষক ও বিশ্লেষকদের সুবিধার্থে খালেদা জিয়ার ভাষনের সংকলনটি করা হবে।

এ ছাড়া প্রকাশনার অন্যতম আকর্ষণ থাকবে বিএনপির ইতিবাচক রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতিবাচক রাজনীতি এবং মহাজোট সরকারের নানা অপকর্ম, দুর্নীতির নিয়ে অঙ্কিত একটি কার্টুনের সংকলন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ