প্রেম করে প্রথমে গোপনে বিয়ে। এরপর ২৪ ঘণ্টা ব্যবধানে পারিবারিকভাবে দ্বিতীয় বিয়ে। দ্বিতীয় বউ নিয়ে বাড়িতে এসে দেখে বাসরঘরে বসে আছে প্রথম স্ত্রী। অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে স্বামী। তারপর দুই স্ত্রীই স্বামীর অধিকার দাবিতে অবস্থান নেয় বরের বাড়িতে। এভাবে গেল ছয় দিন। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ইনাম সাফুল্লি গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, শাহীনুর মিয়া নামে এক যুবকের সঙ্গে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দাতপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল ছালামের মেয়ে ছালমার (২৬) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের সম্পর্ক শাহীনের পরিবার মেনে না নিয়ে তারা বিয়ে ঠিক করে ৩ অক্টোবর। অন্যদিকে শাহীন তার প্রেমিকা ছালমাকে গত ২ অক্টোবর কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু বিষয়টি তার পরিবার মেনে না নেওয়ায় নির্ধারিত তারিখ ৩ অক্টোবর শাহীন তার পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের রাথুরা গ্রামের আবদুল আলীমের মেয়ে রোনা আক্তারকে (১৮) বিয়ে করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে পাকুটিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি আবু বক্করের অফিসে ৪ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয় এ বিয়েতে।
এরই মধ্যে শাহীনুর বিয়ে করছে এমন খবর জানতে পেরে মাত্র একদিন আগে বিয়ে করা স্ত্রী মির্জাপুরের আবদুল ছালামের মেয়ে ছালমা স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে শাহীনের বাড়িতে ওঠে। আর শাহীন নতুন স্ত্রীকে নিয়ে এসে দেখে বাসরঘরে বসে আছে তার প্রথম স্ত্রী ছালমা। ঘটনা জানাজানি হলে মুহূর্তেই গ্রামের মানুষ জড়ো হয় বিয়েবাড়িতে। আনন্দ রূপ নেয় বিষাদে। অবস্থা বেগতিক দেখে স্বামী শাহীনুর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুরো সাটুরিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে শাহীনুর তার প্রেমিকা ছালমাকেই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অনড় থাকায় পরিবার প্রথম স্ত্রীকেই মেনে নেয়। তাই দ্বিতীয় স্ত্রী রোনা আক্তারকে দেনমোহরের ৪ লাখ টাকা দিয়ে তালাক দিতে গত বুধবার সন্ধ্যায় গ্রাম্য সালিশ বসে।
সালিশে পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, সাফুল্লির স্থানীয় ইউপি সদস্য আমীর আলী, সাবেক ইউপি সদস্য পাত্তা মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীর দেনমোহরের ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে তাকে তালাক দেওয়ার রায় দেন।
দ্বিতীয় স্ত্রী রোনার ভগ্নিপতি উজ্জ্বল হোসেন জানান, শাহীন ২ অক্টোবর ছালমাকে বিয়ের কথা গোপন রেখে পরদিন ৩ অক্টোবর আমার শালিকা রোনাকে বিয়ে করে তার নিজ বাড়িতে নেয়। এরপর আমরা জানতে পারি তার আরেক স্ত্রী বাসরঘরে বসে আছে। পরে বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে রোনাকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে তালাক করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে গতকাল সকালে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ১ লাখ টাকা স্থানীয় মাতবর ও আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগবাটোয়ারা করেছেন।
ইনাম সাফুল্লি গ্রামের পাত্তা মেম্বার ও ইউপি সদস্য আমীর আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীর ৪ লাখ টাকা গতকাল সকালে রোনার পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ১ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারার কথা অস্বীকার করেন তারা।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
























