সময় সংবাদে খবর প্রচারের পর অসহায় সিফাত ও তার মায়ের দায়িত্ব নিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। নগদ দুই লাখ টাকা ছাড়াও সিফাতের পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে আর্থিক সহায়তা করার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি ১০ বছর বয়সী সিফাতের জীবন সংগ্রাম নিয়ে সংবাদ প্রচার করে সময় টেলিভিশন। এতে তুলে ধরা হয় অসহায় এক শিশু ও তার মায়ের জীবনের গল্প।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রসুলপুর গ্রাম। কবি জসীম উদ্দিনের আসমানী কবিতার মতোই নির্ভৃত এ ‘রসুলপুর’ গ্রামে বাস করেন শিল্পী খাতুন নামে এক নারী ও তার একমাত্র ছেলে সিফাত।
বাবা হারা সিফাতের মাও অসুস্থ দীর্ঘদিন ধরে। যখন সুযোগ ছিলো তখন মা ও ছেলের সংসার চলতো অন্যের বাড়িতে কাজ করে। কিন্তু নানাবিধ অসুখে সিফাতের মা এখন শয্যাশায়ী।
তবে অদম্য তার ছেলে সিফাত। ১০ বছর বয়সী এ ছেলেই গ্রামের বাজারে একটি চায়ের দোকানে কাজ করে। দিনে তার আয় ৫০ টাকা। সেটি নিয়ে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাড়িতে দিয়ে সিফাত স্কুলে যায়। এভাবেই চলছিল মা-ছেলের জীবন যুদ্ধ।
সম্প্রতি সেই যুদ্ধের খানিকটা অংশ তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে। মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সংবাদটি। নজর কাড়ে র্যাব মহাপরিচালকের। রোববার (২৩ জুলাই) র্যাব হেডকোয়ার্টার্স থেকে মহাপরিচালকের নির্দেশে সিরাজগঞ্জ থেকে মা ও ছেলেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়।
এরপরের গল্পটা পুরোপুরি মানবিকতার; হার না মানা এক সন্তানকে সাহস জোগানোর।
র্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন সিফাতের কাছে জানতে চান, মাসে কত টাকা হলে সে পড়াশুনা করতে পারবে। উত্তরে সে যা বলে তা শুনে হতবাক সেখানে উপস্থিত সবাই!
ছোট্ট সিফাত জানায়, ৫০০ টাকা হলে সে চলতে পারবে।
র্যাবের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার পর সিফাতের মা জানান, এ যেন স্বপ্ন! স্বপ্নের মতোই লাগছে সব। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এটা তো আশাও করিনি কোনোদিন পাবো।
একথা শোনার পর রোববারই সিফাতের মাকে র্যাবের পক্ষ থেকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাতে তুলে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা।
এরপর র্যাবের মহাপরিচালক জানান, সমাজের সামর্থ্যবানরা যদি অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তবে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সময় লাগবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই মা ও ছেলের খবরটাই সময় সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’
সিফাতের ইচ্ছে, বড় হয়ে সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে, যাতে শুধু মানুষ নয়, সে গোটা মানবতার পাশে দাঁড়াতে পারে মানুষের মতো করে।