বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এমন অনেক ম্যাচ খেলেছে যে জয় তাদের হাতের নাগালে কিন্তু শেষ দিকে ধসে গিয়ে ম্যাচ হেরে এসেছে। অথবা সহজ জয় পাওয়া ম্যাচও হেরে গিয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বদলাচ্ছে খেলার ধরন। ব্যাটিং-বোলিং দুই ডিপার্টমেন্টই টাইগারদের এখন বিশ্বমানের। তারই প্রমাণ মিললো ইংল্যান্ডে আইরিশদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ৪৫ ওভারে ৩২০ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ এবং সবশেষ গত পরশু রাতে তো হারতে থাকা ম্যাচই জিতে সিরিজ নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছেন টাইগাররা।
কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচে জয়ের আশাই করেননি টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আর এমনটা হওয়াও একদম স্বাভাবিক, কারণ আইরিশদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে তখন বাইরেই চলে গিয়েছিল। তবে পার্টটাইম বোলার নাজমুল হোসেন শান্ত এবং দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাঁচ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। আর তাই তো ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জানালেন এ ম্যাচে জয়টা তার কাছে খুবই স্পেশাল। এ সময় আলাদা করে প্রশংসা করেন দলের খেলোয়াড়দেরও।
তামিম বলেন, ‘এ ম্যাচ আমার কাছে খুবই খুবই স্পেশাল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা সবসময় উলটো দিকটাই দেখে এসেছি। জয়ের মতো অবস্থায় থেকে আমরা হেরেছি অনেক বার। খুব বিরল যে আমরা এসব ম্যাচ জিতেছি, বিশেষ করে যখন বোলিং করছি। এটা দেখতে পাওয়াটা তাই খুবই তৃপ্তির। বোলিং গ্রুপ এখান থেকে দারুণ আত্মবিশ্বাস পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি বলি আমরা ম্যাচটা জেতার আশা করেছিলাম, তাহলে সেটা মিথ্যা বলা হবে। একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তবে ক্রিকেট তো মজার খেলা, আমরা তা যথেষ্ট দেখেছি। ২-১ উইকেটেই ম্যাচ বদলে যেতে পারে, এটা মাথায় ছিল। স্কোরবোর্ডের চাপ খুব বাজে ব্যাপার। ফিজ যেভাবে বোলিং করেছে এবং বিশেষ করে আমরা যখন ক্যাম্পার ও টাকারকে ফেরাতে পারি, তখন বিশ্বাস ফিরেছে যে আমরা জিততে পারি। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। খুব ভালো বলব না, তবে ‘টাফ’ ক্রিকেট খেলেছি। ৪৫ ওভার ৩২০ রান তাড়া করা, মাঠের আকার যেমন হোক বা প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, কাজটা কঠিন। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা যেভাবে খেলেছি এবং ব্যাট করেছি, তা ছিল অসাধারণ। আমার কাছে মনে হয়, ব্যাটিংয়ে আরো ভালো করতে পারি। বিশেষ করে আজকের (রোববার) মতো পরিস্থিতিতে। প্রথম ২৫ ওভারে আমরাই বলতে গেলে দাপট দেখিয়েছি। ওভার প্রতি ছয়ের মতো করে রান তুলছিলাম। কিন্তু শেষটা ভালো করতে পারিনি। যে অবস্থায় ছিলাম, ৩০০ থেকে ৩১০ রান করা উচিত ছিল। এই একটা জায়গায় আমরা ভালো করতে পারি।’ এ সময় বোলারদের কৃতিত্ব দিয়ে অধিনায়ক জানান এমন বোলিং ইউনিট থাকলে অধিনায়ক হিসেবে কাজ করা সহজ হয়ে যায়। বলেন, ‘যদি আপনার হাতে ভালো বোলিং আক্রমণ থাকে, তাহলে অধিনায়কত্ব করা খুবই সহজ। এখন দলে যারা আছেন তাদের নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। ফাস্ট বোলাররা যারা তারা খুবই ভালো করছে। এখানে কয়েক জন নেই। যেমন তাসকিন চোটে আছে। সে অনেক উন্নতি করেছে। আমাদের বোলিং আক্রমণ এখন খুবই ভালো।’
তবে আলাদা করে ডেথ ওভারে তরুণ পেসারে হাসান মাহমুদের প্রশংসাও করতে ভোলেননি অধিনায়ক। এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ তামিমের বিশ্বাস, এই অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে হাসানকে। তামিম বলেন, ‘সে এখন যেভাবে বোলিং করছে, তা বিশ্বমানের। বিশেষ করে নতুন বলে সে অসাধারণ। বয়স খুব কম হলেও ডেথ ওভারে সে দারুণ পরিণত। চাপের মধ্যে সে দারুণ ধীরস্থির। তার জন্য এটি বড় শিক্ষাও। অনুশীলনে কেউ হাজারটা বল করতে পারে। কিন্তু ম্যাচে এই ধরনের চাপের মধ্যে কাজটা করতে পারা দারুণ। এখান থেকে সে অনেক কিছু শিখবে।’
এদিকে বিগত কয়েক সিরিজ ধরেই ভালো খেলছেন নাজমুল হাসান শান্ত। গেল বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই নিজেকে নতুন ভাবে প্রকাশ করছেন তিনি। এ বছর ৭ ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটি করে টাইগারদের জয়ে অবদান রাখছেন হয়ে উঠছেন দলের ভরসার জায়গা। তবে ব্যাটিংয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখছেন না শান্ত পাশাপাশি আলাদা করে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি ফিল্ডিংয়েও। এই আয়ারল্যান্ড সিরিজেও অসাধারণ ফিল্ডিং করেছেন মাঠের নানা প্রান্তে। এসবের পাশাপাশি শান্তর দল অন্তপ্রাণ মানসিকতাও তুলে ধরে তামিম জানালেন শান্ত ‘গ্রেট টিমম্যাট’। বলেন, ‘সবশেষ ২-৩ সিরিজ ধরেই সে খুব ভালো খেলছে। নিয়মিত রান করছে। আমাদের জন্য যা দারুণ ব্যাপার। তিন নম্বর এমন একটি পজিশন, যেখানে লম্বা সময়ের জন্য কাউকে আমরা নিয়মিত পাইনি। আমার মনে হয়, তিন নম্বরে সে নিজের জায়গা পাকা করেছে। সে রান করছে নিয়মিত। শুধু রানই নয়, যেভাবে সে মাঠে ফিল্ডিং করে, সব জায়গায় নিজের সেরাটা দেয়। গ্রেট টিমম্যান ওর জন্য আমি খুবই খুশি।’