মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় টানাটানি করায় প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলীর উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে স্বীকার করেছে এই ঘটনায় গ্রেফতার ৫ ছিনতাইকারী। মঙ্গলবার ৮ সেপ্টেম্বর নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলী খুনের ঘটনায় সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার বিকালে ৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা আইয়ুব আলীকে ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি স্বীকার করে বলে তিনি জানান।
গ্রেফতার পাঁচ ছিনতাইকারী হলো— চট্টগ্রামের সদরঘাট থানাধীন পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার মো. ইউছুফের ছেলে মো. রাব্বী (২২), পটুয়াখালীর দুমকি থানাধীন আংগারিয়া এলাকার মো. রফিকের ছেলে মো. আল আমিন (২২), কুমিল্লার তিতাস থানাধীন রঘুনাথপুর এলাকার মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. বাবু প্রকাশ ছোট বাবু প্রকাশ শাকিল (২০), কুমিল্লার মুরাদনগর থানাধীন মো. হানিফের ছেলে মো. সোহেল (২৫) এবং লক্ষ্মীপুর সদর থানাধীন পেয়ারাপুর এলাকার মো. আবুল কালামের ছেলে মো. কামাল হোসেন প্রকাশ রনি (২০)। তারা সবাই নগরীর সদরঘাট এলাকায় বসবাস করে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নগরীর চৌমুহুনী এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিতে খুন হন প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলী (৫০)। আইয়ুব আলী নগরীর লালখান বাজার এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে ওই এলাকা থেকে রিকশায় করে বারিক বিল্ডিং মোড় যাওয়ার পথে চৌমুহুনী এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা তার উরুতে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এএএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে তিন জনকে শনাক্ত করা হয়। তাদের তিন জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা প্রাইভেটকার চালককে ছুরিকাঘাত করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ঘটনার দিন তারা ছয় জন পিকআপ নিয়ে কামাল গেইট থেকে বের হয়ে কদমতলী, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট হয়ে চৌমুহুনী এসে আইয়ুব আলীকে টার্গেট করে। এরপর পিকআপ থেকে নেমে আল আমীন, সোহেল আইয়ূব আলীকে বহনকারী রিকশার গতিরোধ করে তার কাছে থাকা কাপড়ের ব্যাগ, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাই করে পালানোর সময় মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন নিয়ে টানাটানি করায় আইয়ূব আলীর ডান পায়ের উরুতে আল আমীন ছুরিকাঘাত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতার পাঁচ ছিনতাইকারীর মধ্যে চার ছিনতাইকারী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’ গ্রেফতার ৫ জনের কাছ থেকে এ ঘটনায় ব্যবহৃত পিকআপ, ছুরি ও আইয়ুব আলীর ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এএএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চৌমুহুনি এলাকায় ছিনতাই করে পিকআপটি নিয়ে তারা কমার্স কলেজ হোস্টেল সড়ক দিয়ে পশ্চিম মাদারবাড়ির দিকে চলে যায়। ওই রাস্তার আশপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরায় এটি ধরা পড়ে। পরে পিকআপটি পশ্চিম মাদারবাড়িতে একটি গ্যারেজে রেখে দেয়। সেখান থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে এ ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি ও ছিনতাই হওয়া আইয়ুব আলীর ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সদরঘাট থানার পূর্ব মাদারবাড়ি কামাল গেইট এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে পিকআপটি ভাড়া নিয়ে তারা ছিনতাই করে। ওয়াসার মোড় থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রধান সড়কে তারা রিকশা কিংবা পথচারী দেখলে তাদের পথরোধ করে টার্গেট করা ব্যক্তির কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিত। পথে তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিজেদের ফিশারি ঘাটের শ্রমিক পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে যায়।’