মহামারি করোনার মধ্যেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। শক্তি সঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়া ঝড়টি আঘাত হানতে পারে আগামীকাল রাতে। ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় জনসাধারণকে সতর্ক করছে স্থানীয় প্রশাসন। উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার সাইক্লোন শেল্টার। এদিকে ঝড়ের প্রভাবে রাজধানীতে বেড়েছে তাপপ্রবাহ, জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি।
করোনা দুর্যোগের মধ্যে নতুন শঙ্কা নিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান রূপ নিয়েছে সুপার সাইক্লোনে। যা আগামী মঙ্গলবার নাগাদ আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ দিক পরিবর্তন করে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত হানতে পারে। উপকূলীয় জেলা, দ্বীপ ও চরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
১৮ মে সোমবার আবহাওয়ার ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এটি আজ বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে ২০ মে বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও জানানো হয় এ বিজ্ঞপ্তিতে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা,পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কের মধ্যে রাজধানীতে বিরাজ করছে মৃদু তাপপ্রবাহ। জনজীবনে নেমে এসেছে অশ্বস্তি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণেই এ অবস্থা জানিয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঝড় এগিয়ে এলে কমে যাবে তাপপ্রবাহ।
করোনার কারণে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে উপকূলবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় এখনই পদক্ষেপ নিতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।