চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাফল্য যাদের আকাশচুম্বি, বিশ্বের শক্তিধর পরাশক্তিগুলোর অসহায়ত্ব যখন চোখের সামনে প্রতীয়মান।যে যার মত পরাজয় বরণ করে ভাগ্যবিধাতার উপর ছেড়ে দিয়েছে। যদিওবা চিকিৎসা বিজ্ঞনীরা দিন-রাত নির্ঘুম অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, সমাধান খুঁজে পেতে। এখনও পর্যন্ত শতভাগ আশারবাণী কেউ শুনাতে পারছে না। সবাই যখন একবাক্যে মেনে নিয়েছে- ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। তখন আমরা কোন পথে হাঁঠছি। আমরা কী আদৌ নিজেদের রক্ষায় কোন সুপরিকল্পনা হাতে নিতে পেরেছি?
বিশেষ ছুটি/লকডাউন/জরুরি অবস্থা ঘোষণা জনগণের মাঝে কতটুকু কর্যকর, তা ভেবে দেখার সময় এসে গেছে। কারণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই লক্ষনীয় যে, বিশেষ ছুটি/লকডাউন/জরুরি অবস্থা কোনটাই প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি জনগনের উপর। মানুষ ঠিকই কোন না কোন ইস্যুতে ঘরে থেকে বের হচ্ছে।মানুষের মনে সংক্রমণের ভয়াবহতা বুঝাতে হয়ত ব্যার্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।
কথায় আছে আপনার সন্তান যদি নিজের ভালোটা না বুঝে, অভিভাবক হিসেবে আপনাকে আরো কঠিন হতে হবে। আপনার কঠিন আচরণ সাময়িকভাবে সন্তানরা সমালোচনাও করে, পরবর্তীতে সেই সন্তানই গর্ব করে বলবে, আপনার শাসন সঠিক ছিল। তাই জনগনকে ঘরে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও কঠিন হোন। আমি তথা্ আমাদের সকলের শেষ ভরসাস্থল বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনি।
১৯৭১ সালে আপনার পিতা তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের উপর আপামর বাঙালি ছিল নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিরস্ত্র বাঙালি অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র সজ্জিত পাকবাহীনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার সোনালী সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল, ঠিক তেমনি আজও আপনার আহবানে বাঙালির ৭৫% জনতা ঘরেই অবস্থান করছে। অমান্যকারী বাকী ২৫% এর জন্য পুরোদেশ হুমকির মূখে পড়তে পারে না। এই ২৫% অবাধ্য জনগণই একদিন ঘরে থাকা আপনার প্রিয় ৭৫% জনতাকে বিপদের মুখে ফেলে দিবে।
অবাধ্য তৎসামন্য এই জনগণ মনে করছে আপনার সাধারণ ছুটি যেন ঈদের ছুটি। ঈদের আমেজে তারা প্রতিনিয়ত আড্ডা, জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে তরতাজা খেতে বাজার সওদা (যারা নিয়মিত সময়ে সপ্তাহে একবার বাজারে যেত), প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ব্যংকে যাতায়ত, যেন সব কাজ বন্ধেই শেষ করতে হবে। ব্যংক যাতায়ত যে সবাই জরুরি প্রয়োজনে যাচ্ছে তা না, যা একজন ব্যংক কর্মকর্তার ভাষ্য মতে বুঝায় যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকে ইদানিং এমন কিছু গ্রাহক বেড়ে গেছে, যারা সারা বছর কোন লেনদেন করেনি, এখন আসছে ঐ ইনেকটিভ একাউন্ট একটিভ করতে। যা কখনো গ্রহযোগ্য নয়, তা কোন মতেই জরুরি লেনদেন হিসেবে বিবেচনা হতে পারে না।
সম্মিলিত প্রার্থনার কথা কি বলব, ধর্মপালন এখন এমন পর্যায়ে আছে তা দেখে হাসব কি কাঁদব বুঝতে পারি না। যে মানুষ স্বাভাবিক সময়ে ধর্মপালন কি সেটি ভেবে দেখার সময় পায়নি। সে এখন এমন ধার্মিক হয়ে গেছে, ধর্মগৃহে গমণ না করলে তার ধর্ম পালন হয় না। আমি ধর্ম পালনের বিরোধী নই, হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সঠিক ধর্ম পালন মানুষকে অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত রাখে। সমাজের বিশৃঙ্খলতা রোধ করে। তাই সমাজ ও দেশের জন্য একজন ধার্মিক যতটা নিরাপদ ও কাম্য, তেমনি একজন ধর্মান্ধ ততটা ভয়ংকর যা কখনো কাম্য নয়।
জরুরি অবস্থায় যেখানে সবধর্মে নিজেকে নিরাপদ থেকে ধর্মপালন করতে বলছে, এবং অন্যকে আপনার দ্বারা অনিরাপদ করতে বাধা প্রদান করছে। এটির একমাত্র সমধান ঘরে অবস্থান করে ধর্ম পালন করা, যার জন্য ধর্মগৃহে গিয়ে সম্মিলিত প্রার্থনা করার কোন যুক্তি আছে বলে মনে করি না।
করোনা সংকটকালে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং দেশের অর্নীতির ভিত ঠিক রাখা। বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা লকডাউনের প্রভাবে স্থবীর হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে আজ অর্থনীতি কঠিন সংকটের মুখে পতিত। আমাদের দেশও যেহেতু পৃথিবীর একটি অংশ, সেহেতু অর্থনীতির মন্দা অবস্থার প্রভাব স্বাভাবিকভাবে আমাদের উপরও পড়েছে।
একটি দেশের প্রধান হিসেবে দেশের অর্থনীতির অবস্থা যাতে চূড়ান্ত হুমকির মুখে না পড়ে, তার জন্য অবশ্যই আপনার সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা আছে। যার জন্য সম্প্রতি একটি ঘোষণায় আগামী ২৬ তারিখ থেকে সাধারণ ছুটির সময় ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ এবং জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থা-বিভাগ সমূহ সীমিত আকারে খোলা রাখা যাবে।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সাধারণ ছুটি চলাকালীন ঢাকাসহ সকল বিভাগ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিম্নবর্ণিত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এরঅধিনস্ত দপ্তর সমূহ সীমিত পরিসরে খোলা রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।’
অফিস খোলা থাকবে এমন কার্যালয় ও মন্ত্রণালয় গুলো হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জন প্রশাসন মন্ত্রালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, জন নিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা ও সেবাবিভাগ, তথ্যমন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সমাজক ল্যাণমন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
যার ফলে স্বাভাবিক ভাবে বাংলাদেশর প্রধান অর্থনীতিক মাধ্যম হিসেবে ধরা হয় পোশাক শিল্পকে। সাধারণ ছুটির এই শিতিলতায় প্রায় সকল পোশাকশিল্প কারখানা খুলে দিবে মালিকপক্ষ। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অর্থনীতির মূল এই প্রতিষ্ঠানগুলি সচল রাখাও জরুরি। কিন্তু আপনার নির্দেশনা আছে, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার বিধি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত করতে হবে। সুন্দর ও প্রজ্ঞাময় এবং দূরদর্শী এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।
কিন্তু সম্প্রতি গাজীপুরের পুলিশ সুপারের বক্তব্য আমাদের ভাবিয়ে তুলে। অনেক প্রতিষ্ঠান মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিরহ শ্রমিকদের কারখানায় উপস্থিত করে। যেখানে থাকে না শ্রমিক সুরক্ষার কোন যথাযত ব্যবস্থা। যদি এই হাল হয়, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা ভেবে দেখা দরকার।
কারণ একটি কারখানায় ১০০/১৫০ শ্রমিক কাজ করে না, সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করে। যদি একটি পজিটিভ রোগী একটি কারখানায় থাকে, তাহলে শুধুমাত্র ঐ কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক ঝুকির মধ্যে পড়বে না, ঐ শ্রমিকদের পরিবারগুলোও বাদ যাবে না। যা লক্ষধিক মানুষ হুমকির মুখে পড়বে।
সবচেয়ে বড়কথা নিম্ন আয়ের কারণে পোষাক শ্রমিকের বেশীরভাগ আবাসস্থল হয় গাদাগাদি ভাবে বা জনবহুল অঞ্চলে। যেখানে শুধুমাত্র পোষাক শ্রমিকরা থাকে না, অন্যান্য শ্রমিকরা অবস্থান করে। যা অতীব চিন্তার বিষয়, তা অবশ্যই গভীরভাবে ভাবতে হবে।
যেখানে আপনার নমনীয়তার সুযোগে কোন অসাধু ব্যবসায়ী যাতে আপনার নির্দেশিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মাবলী অনুসরণ না করে পুরো দেশটাকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে, সেদিকে কঠিন নজরদারী জরুরি এবং অমান্যকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সবচেয়ে দুঃচিন্তার বিষয় আক্রান্তর সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, তত চাপ বাড়বে সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা যদি আক্রান্ত হয়ে পড়ে তখন কি ভয়াবহ অবস্থা হবে অব্যশই ভেবে দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে ডাক্তার, পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে।যদি এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন সেবা দিতে ভয়সহ বিভিন্ন জঠিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তার চেয়ে বড় কথা যারা সেবা দিবে তারাই যদি আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে। তাই সময় থাকতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আনপার জিরো টলারেন্স শুধু দেশকে নয় পৃথিবীকে বিমোহিত করেছে। অন্যায়কারী যেই হোক নিজ দলের বা বাইরের, যতবড় রাঘববোয়াল হোক না কেন, আপনি ১% ছাড় দেন নি। দীর্ঘ শাসনআমলে অগনিত নজির স্থাপন করেছেন।
আর মানবিকতা ও সুশাসন এবং দুরদর্শিতায় আপনার খ্যাতি বিশ্বময়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাদার অব হিউম্যানেটিও আনপার ঝুলিতে। ৯৮ সালে পৃথিবী দেখেছে বন্যাকবলীত গৃহবন্দী মানুষকে কিভাবে মাসের পর মাস নিজ দায়িত্বে খাদ্যসরবরাহ করে, পুনরায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছেন। যেখানে স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লক্ষ লক্ষ মানুষ অনহারে মৃত্যুর আশঙ্খা করেছিল, সেখানে কিভাবে বিচক্ষণতার নজির স্থাপন করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্খাকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন।
করেনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যেভাবে তৃণমূল পর্যায়ের খবরা খবর রাখছেন, তা পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধান’রা পিছিয়ে আছে। আপনার সুপরিকল্পনায় ভাইরাসের মহমারী দ্রুত ছড়াতে পারেনি, প্রিয় বাংলাদেশে। যেখানে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি ব্যর্থ, সেখানে আপনি সফলতার হাসি হেসেছেন।
আমরা চাই অদুর ভবিষ্যতেও আপনার সুপরিকল্পনা আশা করছি। আমাদের শেষ আশ্রয়স্থলও আপনি। তাই বিনীতভাবে আবেদন জনসমাগম রোধ কল্পে মানবিকতার পাশাপাশি কঠিন হওয়ার আহবান, না হলে আপনার সব সুপরিকল্পনা ভেস্তে যাবে কিছু অবাধ্য মানুষের কারণে। কারণ গণজমায়েত বন্ধ করা না গেলে হয়ত মৃত্যুপুরী হবে ঘনবসতি এই প্রিয় বাংলাদেশ। যা আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।
যেভাবে এই দেশ ও জনতাকে এতটাকাল নিরাপদে আগলে রেখেছেন, সেভাবে ভবিষ্যতেও আপনার পানে চেয়ে আছে বাংলার কোটি কোটি জনগণ। আপনি সজাগ আছেন বলেই আমরা নিরপদে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও সেই আশা ব্যক্ত করি।
ফরহাদ আমিন মোহাম্মদ ফয়সল,
সম্পাদক
আর্থনিউজ টুয়েন্টিফোর