বঙ্গবন্ধুর কুখ্যাত খুনি আব্দুল মাজেদ দীর্ঘদিন মাষ্টারমশাই পরিচয়ে ভারতের কলকাতায় পলাতক থাকার পর সম্প্রতী গ্রেফতার হয়ে রায় কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকর করার পূর্বে মাজেদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করে গোয়েন্দা সংস্থা। যার ধারাবাহিকতায় উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে দত্ত ডাক্তার ওরফে রিসালদার মোসলেহ উদ্দীনকে আটক করা হয়েছে বলে জানায়, ভারতের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম।
কুখ্যাত এই খুনি দীর্ঘদিন উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন । এলাকায় ডাক্তার দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন এবং ‘ইউনানী ফার্মেসী’ নামে একটি প্রতিষ্টানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করতেন বলে জানা যায় । ঠাকুরনগর রেলস্টেশনের পিছনে একটি বাড়ির মেয়েকে তিনি নিজ খরচে বিয়ে করে সংসার করে বলে জানা যায়।
ইতিহাস সুত্রে জানা যায়, রিসালদার মোসলেহ উদ্দীন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মিশনে অগ্রভাগে ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে গুলি করে হত্যা করে এই কুখ্যাত খুনি। তাছাড়া জেলহত্যায়ও জড়িত ছিলো এই খুনি। নারকীয় দুই হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আর্শীবাদে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব পান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে পরবর্তীতে সময়ে অন্য খুনীদের সাথে এই কুখ্যাত খুনি বঙ্গভবনে দায়িত্বপালন করেন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হলে অন্য খুনীদের সাথে সেও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তার কয়েকবছর পর চলে আসেন ভারতে এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
আরো পড়ুন : ফসল উৎপাদন উপযোগী এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে আহবান প্রধানমন্ত্রীর
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রিসালদার মোহলেহ উদ্দীন গ্রেপ্তার হয়েছে কি-না সে বিষয়টি তিনি এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় পলাতক পাঁচ আসামির মধ্যে দুইজন গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছে। তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে আছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দি পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় আসামি পলাতক ছিলেন। তাদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে ৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন এবং ১১ এপ্রিল ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। পলাতক বাকি পাঁচজনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছেন। আর রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতের ছিলেন বলে তথ্য ছিল আগে থেকে।