মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আস্সালামু আলাইকুম।
আপনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বর্তমানে এদেশের ১৮ কোটি মানুষের অভিভাবক। সরকারের নির্বাহী প্রধান। আপনার পরিকল্পনা, পরামর্শ, নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। গত মার্চ মাস থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে শুরু হওয়া করোনা মহামারী ইতোমধ্যেই বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলোকে কাবু করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালী, স্পেন, চীন, কানাডা জাপানের মত বৃহৎ ও আধুনিক প্রযুক্তিতে ভরপুর সব রাষ্ট্রে লাশের স্তুপ হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় বাইশ লক্ষ, মারা গিয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। বিশ্বব্যাপী চলছে লকডাউন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশেও জারী করেছেন লকডাউনের আদলে জাতীয় ছুটির মত পদক্ষেপ। করোনার ছোবল থেকে দেশবাসীকে রক্ষায় এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য মানুষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বেরুচ্ছেন না। এই দূরাবস্থায় সরকারী, বেসরকারীভাবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকা ভিত্তিক গরীব অসহায় দিনমজুরদের সাধ্যমত ত্রাণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরী খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যদিও সরকারি ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে আবার আপনি ব্যতিক্রম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বড়, মাঝারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং সর্বস্থরের জনগণের জন্য একটি বিশাল অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যাতে আমরা আশান্বিত।
এই অবস্থায় একটি শ্রেণী কিন্তু নীরবে অসহায় ও শংকাময় জীবন যাপন করছে। যাদের সুখ-দুঃখের কথা কেউ জিজ্ঞেস করছেননা, যারা ব্যাংক ঋণ, বাসাভাড়া, দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, দৈনিক অতি প্রয়োজনীয় খরচ, পরিবারের অসুস্থ রোগীর ঔষধপত্রের খরচ মেটাতে ইতোমধ্যেই হিমশিম খাচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবীর তেমন নগদ টাকা জমা থাকে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির ব্যবসায়ীরা দৈনিক আয় দিয়ে পরিবার চালান, কিছু টাকা হাতে রাখেন ব্যবসায়ীক পণ্য ক্রয় করবার জন্য। আর চাকুরীজীবীরা বিভিন্ন দোকান থেকে বাকীতে জিনিস নেন। বেতন পাবার সাথে সাথে বাসাভাড়া, বিভিন্ন বিল ও বাকী টাকা শোধ করলেই সামান্য টাকা অবশিষ্ট থাকে। দেশে গত এক মাস ধরে বিরতিহীন অচলাবাস্থা। কারো কোন আয় নেই, একজন আরেকজন থেকে ধার নেবার পরিবেশও নেই।
তাহলে মধ্যবিত্তদের হচ্ছেটা কি? এ মাস (এপ্রিল) যখন বাসার জমিদার ভাড়ার জন্য দরজায় কড়া নাড়বেন বা কলের পর কল দিবেন তখন তো আকাশ ভেঙ্গে পড়বে ভাড়াটিয়া মধ্যবিত্তদের, যারা জীবিকা অথবা ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য গ্রাম থেকে এসে ভাড়ায় থাকেন। জমিদার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে বাদানুবাদ, সংঘর্ষ শুরু হতেই পারে। তাই আশা করি এ ব্যাপারে উভয়পক্ষের জন্য একটি সম্মানজনক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা দেয়া জরুরী। জমিদারদের মধ্যেও শ্রেণি ভাগ আছে। বাসায় ভাড়ার উপর জীবিকা নির্ভরশীলরাও যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হন সেটিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এর আগে কমপক্ষে দু মাসের বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল, একবছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা আসাটাও জরুরী মনে করছি। না হলে বাড়িওয়ালারা প্রশ্ন তুলতে পারেন। অন্তত এই দুটি সিদ্ধান্ত যদি আপনার পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে তাহলে অজানা আতংকে থাকা মধ্যবিত্ত ভাড়াটিয়ারা একটু স্বস্থি পাবেন অন্যথায় ঘরে ঘরে নীরব কান্না ও দূর্ভিক্ষ শুরু হবে দেশব্যাপী। মধ্যবিত্তরা এলাকার গরীব দুঃখিদের সাহায্যে এগিয়ে আসবার প্রচেষ্টাটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন :দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হারে সবচেয়ে এগিয়ে ২১ থেকে ৩০ বছরের তরুণ জনগোষ্ঠী
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আরেকটি শ্রেণিও অত্যন্ত কষ্টে আছে। কিন্তু সামাজিক মর্যাদা ও চক্ষুলজ্জায় তাঁরা নীরবে চুপটি মেরে কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছেন। সে শ্রেণিটি হলো এদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের পরিবার। অতীতে আমরা দেখেছি দেশে দুর্যোগ পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রবাসীরা সর্বপ্রথমে এগিয়ে আসতেন। কিন্তু করোনা এমন একটি দুর্যোগ যেটি শুধু বাংলাদেশে নয় সারা পৃথিবীতেই একই সময়ে ত্রাস চালাচ্ছে। করোনার নির্মমতায় সারা বিশ্বে অবস্থানরত রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরাও লকডাউনে আছেন। কর্মহীন হয়ে কোনরকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন। দূতাবাস গুলোর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জন্যও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে যারা দীর্ঘ সময়ে আপনজনের মায়া ছেড়ে প্রবাসে অবস্থান করছেন তারা যেন এ দুঃসময়ে বঞ্চিত না হয় তা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের পরিবার সমূহের তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকেও সরকারী সাহায্যের আওতায় আনতে হবে। এ কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধু মানবিক দায়িত্বই নয় বরং এটা প্রবাসীদের রক্ত-ঘাম ঝরানো রেমিট্যান্সের কৃতজ্ঞতা স্বীকারেরও সময়।
অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ বিষয়দ্বয়ের ব্যাপারে আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। এ দেশের উপর রহমত ও করুণা বর্ষণ করুন, আমিন।
নিবেদক : সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজমের