‘না বুঝে তড়িঘড়ি করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটি নিয়ে টিআইবি ও বিএনপির বক্তব্যদান চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আজ শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিকালে একাদশ জাতীয় সংসদের ৭ম এবং চলতি বছরের দ্বিতীয় অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে সংসদ চত্বরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র পক্ষ থেকে গতকাল আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটির বিষয়ে দেয়া বক্তব্য খণ্ডন করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যে ত্রাণ বিতরণ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, তা শুধুমাত্র দলীয় ত্রাণের সুষ্ঠু বিতরণ ও সমন্বয়ের জন্য, সরকারি ত্রাণ বিতরণের জন্য নয়।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে বা বিরোধী দল হিসেবেও সবসময় সকল দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা সেই নির্দেশই দিয়েছেন’ উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান।
তিনি বলেন, ‘দলীয় ত্রাণ কমিটির কাজ হবে শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণ বিতরণ করা। আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরু থেকেই যে ত্রাণ বিতরণ করছেন, তা সমন্বয় করা যাতে সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়, কোনো দুস্থ মানুষই যাতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের বাইরে না থাকে এবং সুষম বণ্টন হয়।
‘সরকারি ত্রাণ বিতরণে এই কমিটির যে কোনো ভূমিকা নেই, সেটি না বুঝে তড়িঘড়ি করে বিবৃতি দিয়ে টিআইবি ও রিজভী সাহেব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি বরং চরম দায়িত্বহীনতারই পরিচয় দিয়েছেন’, বলেন তথ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে রাজধানীর সংসদ ভবনস্থ সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন পরামর্শ দেয়ার নামে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি না ছড়াতে বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এখন একমাত্র ফোকাসই হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সবার সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ‘জাতীয় টাস্কফোর্স’ গঠনের দাবি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল (বিএনপি মহাসচিব) জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে জাতীয় কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই মুহূর্তে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের প্রশ্ন কেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় কমিটি গঠন করেছেন এবং সে কমিটি করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার টাস্কফোর্স গঠন করেছেন করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রেও করোনা ভাইরাসের কারণে মেডিকেল টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। দুই দেশেই গঠিত হয়েছে মেডিকেল টাস্কফোর্স। মির্জা ফখরুল জাতীয় টাস্কফোর্স বলতে কি বোঝোতে চান? এর ব্যাখ্যাটা কী? তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। এটা কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কোনও বিষয়?
তিনি আরও বলেন, মির্জা ফখরুল কী কিছুদিন পর আবার জাতীয় দুর্যোগ টাস্কফোর্সের কথা বলবেন? তারপর জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলবেন? এটা তো আবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপপ্রণোদিত বক্তব্য। এটা তো আজকের সংকটে করোনো প্রতিরোধে যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব থেকে বিচ্যুতি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শেখ হাসিনার সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের কোনও ভুল হলে ভালো পরামর্শ দিলে আপত্তি নেই। কিন্তু আজ সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে পরামর্শের নামে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো কোনও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার কাজ বলে মনে করি না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জনিয়ে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। ইনশাল্লাহ এ সংকট মোকাবিলা করে জয়ী হবো।
ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও দাবি করেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সবদিক বিবেচনা করে সবার স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের প্রধান্য দিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার করার পর সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অথচ এখন বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে বিএনপি বিরূপ মন্তব্য করা শুরু করেছে। এ মানবিক ক্রান্তিকালে একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে আমরা এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রত্যাশা করি না।
এ সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা এই দুর্যোগের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হতে চাই না। তারপরও বিএনপি নেতারা ঘরবন্দি খেটে খাওয়া মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে একের পর এক মিথ্যাচার বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।