আজ ১৪এপ্রিল ১লা বৈশাখ চট্টগ্রাম বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ(রেজিষ্টার্ড) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ,পূর্ব বৈলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল মান্নানের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী ।
এ উপলক্ষে মরহুমের গ্রামের বাড়িতে অনাড়ম্বর কর্মসূচী পালিত হবে। প্রাকৃতিক বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় মসজিদে খতমে কোআন-দোয়া মাহফিল, কবর জেয়ারত ও গরীব অসহায়দের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ সংক্ষিপ্ত আকারে পালিত হবে।
২০১৩ সালের এইদিনে বি.এল.এফ (মুজিব বাহিনী)র অন্যতম গেরিলা কমান্ডার ৭১’র বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মাত্র ৬৫ বছর বয়সে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
পরিবারের পক্ষ হতে মরহুম আবদুল মান্নানের আত্মার শান্তির জন্য সবার দোয়া কামনা করা হয়েছে…..
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাঙ্গালী জাতির সূর্য সন্তান কমান্ডার আবদুল মান্নান এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কমান্ডার আবদুল মান্নান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে, দেশকে মুক্ত করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই দেশকে স্বাধীন করার পিছনে, সারাদেশের যে কয়েকজন বীর সৈনিকদের মধ্যে কমান্ডার আবদুল মান্নান অন্যতম।
তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বি এল এফ) মুজিব বাহিনীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন।তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরখন্ড) দেরাদুন জেলার কেন্দুয়া মিলিটারি একাডেমিতে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী বাঁশখালী থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষা সংস্কৃতি, রাজনৈতিক সংগঠনের সাথেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংপৃক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর সহযোগীদের মধ্যে ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা ড.আবু ইউছুপ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান চৌধুরী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা কিবরিয়া চৌধুরী, সাবেক কাস্টম কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াই এন জাকারিয়া, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ দিদারুল আলম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম সহ ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় অংশ নেন।
চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় কমান্ডার আবদুল মান্নান নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা- রাঙ্গুনীয়া, কাউখালী, যোগ্যাছোলা, মওরখীল, রানীর হাট, বোয়ালখালী, বাঁশখালীর গুনাগরী ওয়াপদা, বাঁশখালীর সিও অফিস, সাধণপুর বোর্ড অফিস ।
এই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছে, দেশ মাতৃকা ও মানবতার কাজে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অবহেলিত মুক্তিযুদ্ধা ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যও সোচ্চার ছিলেন। তিনি যেভাবে দেশ ও মাতৃভূমির এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের আদায়ের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন, সেভাবে জীবদ্দশায় তিনি মানুষের কাছে প্রাপ্য সম্মানটুকু পায়নি।
বর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ সরকারে থাকলেও, বাঁশখালীসহ দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল কেউ, এই ব্যক্তিকে স্বরণে কোন উদ্যেগ গ্রহণ করেনি ইতোপূর্বে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুভকর নয়। এই মহান ব্যাক্তির মৃত্যু বার্ষিকীর দিনটি প্রতিবার চলে যায় নিরবে নিভৃতে। দলীয় নেতারা এই মহান ব্যক্তিকে স্বরণ করতে ভুলে গেলেও, পারিবারিকভাবে প্রতিবার আয়োজন করা হয় স্বরণসভা, দোয়া মাহফিল ও খতমে কোরআন ও কাঙ্গালীভোজ।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূল্যয়ণ প্রত্যাশিত নয়, কমান্ডার আবদুল মান্নান শুধুমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে সেদিন এদেশের অন্যান্য দেশপ্রেমিক দামাল ছেলেদের মত অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ করে, একটি আধুনিক প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করে মাতৃভূমির মাটি কে স্বাধীন করে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমরা এটি নিয়ে গর্ব করি।দেশপ্রেম আমাদের একমাত্র সম্পদ।কোন বিনিময় নয়- শুধুমাত্র একটাই প্রত্যাশা, দেশের সকল জীবত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার যথাযত সম্মান নিয়ে ভাল থাকতে পারে। সূর্য সন্তানরা নিজের জীবন বাজী রেখে এই দেশ স্বাধিন করেছে, যাতে কিছুতেই পুরানো শকুনরা এই দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যদি এরকম কিছু হয় আবারও আমাদের বাবার মত আমাদের বাবার মত রণাঙ্গনে ফিরে যাব দেশটাকে কাঁধে নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। কোন বিনিময় নয়, দেশকে ভালোবেসেই বাকী জীবন পার করে দিতে চাই।
এই মহান ব্যক্তির ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়, দাফনের ব্যবস্থা করা হলেও পরবর্তী সময় আর কেউ খবর রাখেনি। এই মহান ব্যক্তি বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের বৈলগাও গ্রামের আবদুল কাদের ও জামিলা খাতুনের পুত্র। তিনি ১৯৪৮ সালের ৮ ডিসেম্ভর জন্ম গ্রহণ করেন। বাঁশখালীর শিক্ষিত সমাজের কয়েকজনের মধ্যেও কমন্ডার আবদুল মান্নান ছিলেন অন্যতম।
তিনি ১৯৬৮ সালে বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। কর্মজীবনে তিনি যুদ্ধের পূর্ববর্তী সার্ভেয়ার অব পাকিস্তান, স্বাধীনতা পরবর্তীতে ভূমি মন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ জরিপ বিভাগে কর্মকর্তা ছিলেন।
উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক সালাহউদ্দিন সাকিবের পিতা। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তা ইকবাল বাহার রনি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুনতাসির মাহমুদ মনিও কমান্ডার আবদুল মান্নানের পুত্র ।