শীতের এ সময়টাতে হঠাৎ করেই যেন বেড়েছে মশার উপদ্রব। স্প্রে, ব্যাট, কয়েল নানা প্রতিরোধক নিয়ে আমরাও তৈরি। কিন্তু এগুলো কি স্বাস্থ্যসম্মত? সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বিশেষজ্ঞের কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (শিশু বিভাগ) মাহবুব মোতানাব্বি বললেন, ‘মশার প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি এমনভাবে নিতে হবে যেন আমাদের আশপাশ পরিচ্ছন্ন থাকে। নবজাতক, ছোট শিশু, হাঁপানি বা শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে ভুগছেন এমন মানুষের শ্বাসতন্ত্রের স্পর্শকাতরতা বেশি থাকে। তাই ধোঁয়া, ধুলা, রাসায়নিক পদার্থ, কয়েল, স্প্রে এগুলো সহ্য করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’ এগুলোর বিকল্প ব্যবহার সম্পর্কেও জানিয়েছেন তিনি।
জেনে নিন
মশা যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট বা মশা নিরোধক জাল ব্যবহার করতে হবে। জানালা খোলা থাকলেও নেট দেওয়া থাকলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যে মশাগুলো ঘরে ঢোকে, তার জন্য মশারি কিংবা বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করা যায়।
কয়েলের চেয়ে মশারি ব্যবহারে নিরাপত্তা বেশি। শুধু যে স্বাস্থ্য ভালো থাকে তা নয়, নিরাপত্তার জন্যও এটি ভালো। অনেক সময় কয়েলের ধোঁয়ায় ঘরে আগুন লেগে যেতে পারে।
ছোট মশারি ব্যবহার করতে হবে নবজাতকের জন্য। যে ঘরে নবজাতক থাকবে সেখানে কয়েল বা স্প্রে একদমই ব্যবহার করা উচিত না।
মশার উপদ্রব থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে দেখে নিতে পারেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়ার পরামর্শগুলো।
বাড়ি নির্মাণের সময় বড় জানালা দিতে হবে, যেন বাড়িতে আলো-বাতাস বেশি ঢোকে। ফলে মশার উপদ্রব কিছুটা হলেও কম হবে।
সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, মশা আলো থেকে অন্ধকারে যায়।
যে পথ দিয়ে মশা ঘরে প্রবেশ করে, সেই প্রবেশপথে কয়েল রেখে দিলে কয়েলের ধোঁয়ায় অনেক সময় মশা ঘরে কম প্রবেশ করে। কয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন কয়েলের ধোঁয়ায় পরিবারের কারও বিশেষ করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা না হয়।
গাছের গোড়ায়, প্লাস্টিকের ভাঙা বাটিতে, ফেলে দেওয়া নানা জিনিসে অনেক সময় পানি জমে থাকে, যাতে এডিস মশারা ডিম পাড়ে। এ জন্য ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
স্প্রের ব্যবহারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। নাকে-মুখে মাস্ক পরে নিন বা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের কোনায় কোনায় ওপরের দিকে স্প্রে করুন। যেন রাসায়নিক পদার্থ ওপর থেকে িনচে পড়ে। স্প্রে করার পর অন্তত ১০ মিনিট পর্যন্ত ঘর বন্ধ করে রাখতে হবে এবং সেখানে ঢোকা যাবে না।
মশা মারার জন্য বাজারে যেসব ইলেকট্রিক্যাল ব্যাট পাওয়া যায়, সেসব ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শিশুদের হাতের নাগালে ব্যাট রাখা যাবে না।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের মশা নিরোধক ভ্যাপোরাইজার মেশিন পাওয়া যায়, সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কখনোই বদ্ধ ঘরে এটি ব্যবহার করা ঠিক নয়। এটি ব্যবহারের সময় দরজা-জানালা খোলা রাখুন।