উইকিলিকসের ফাঁস করা নতুন নথিতে দেখা যায়, ফরাসি প্রেসিডেন্টদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সংক্ষেপে এনএসএ। সংস্থাটি বছরের পর বছর ধরে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের উপর গোপনে নজরদারি চালিয়েছে। মার্কিন নজরদারি থেকে রক্ষা পাননি তার পূর্বসূরি নিকোলা সারকোজি এবং জ্যাক শিরাকও। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযুক্ত সংগঠন এনএসএ অবশ্য এ খবরের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এদিকে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ওঁলাদে বুধবার আরও পরের দিকে এই ইস্যুতে তার প্রতিরক্ষা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন।
এনএসএ দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিন ফরাসি প্রেসিডেন্টের ওপর গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও টেকনিকেল নথির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার একথা বলেছে উইকিলিকস। এর আগে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের উপর গোপন নজরদারি চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল এনএসএর বিরুদ্ধে। ফরাসি দৈনিক লিবারেশন এবং নিউজ ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১২ সালের মে মাস (যখন সারকোজির কাছ থেকে ওঁলাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন) পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রেসিডেন্টদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করে এনএসএ।
উইকিলিকস বলেছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওঁলাদে (বর্তমান), সারকোজি (২০০৭-২০১২) এবং শিরাক (১৯৯৫-২০০৭)এবং ফ্রান্সের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফরাসি রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগের উপর এনএসএর সরাসরি নজরদারি থেকে এসব নথি পাওয়া গেছে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল উইকিলিকস ওয়েবসাইট।
নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছাড়াই সারকোজি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর কথা ভেবেছিলেন এবং ওঁলাদে ২০১২ সালে ইউরো জোন থেকে গ্রিসের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে বলা হচ্ছে। এনএসএ জার্মানির উপর নজরদারি করেছে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তা ও কোম্পানির উপর নজরদারিতে জার্মানির বিএনডি গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করেছে বলে খবর প্রকাশের পর পশ্চিমা মিত্রদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির এ তথ্য ফাঁস হল।
শীঘ্রই আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ প্রকাশ হবে জানিয়ে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, ‘ফরাসি জনগণের জানার অধিকার রয়েছে যে, তাদের নির্বাচিত সরকারও কথিত মিত্রের নজরদারিতে থাকছে।’
তবে উইকিলিকসের এই নতুন তথ্য ফাঁস সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হয়নি এনএসএ। সংস্থার মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন,‘আমরা এই গোযেন্দা অভিযোগের ওপর কোনো মন্তব্য করছি না।’ সংস্থার মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন,‘আমরা এই গোযেন্দা অভিযোগের ওপর কোনো মন্তব্য করছি না। কেননা সাধারণত আমরা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের ওপর নজরদারি করিনা। তবে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু জড়িত থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা। এই নীতি সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে বিশ্ব নেতাদের ওপরও প্রযোজ্য।’
এদিকে মঙ্গলবার উইকিলিকসের এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট ওঁলাদে। তবে দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল এলিয়ট–মারিয়ে স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে ফরাসি নেতাদের কথোপকথন নজরদারিতে সক্ষম এটি তারা আগে থেকেই জানতেন। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট তার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কখনো টেলিফোনে কথা বলতেন না বলেও তিনি দাবি করেছেন। তবে উইকিলিকসের এই তথ্য দুটি বন্ধু দেশের বিশ্বাসের সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মিশেল এলিয়ট।