অপারেশন টেবিলে রোগী। শরীর, নাক, মুখ, মাথা অ্যাপ্রনে ঢাকা চিকিৎসক, নার্সদের। হাতে ছুরি-কাঁচি। বাইরে উৎকণ্ঠায় প্রতীক্ষারত বাড়ির লোকজন। কেমন একটা গুরুগম্ভীর পরিবেশ। এ ছবি দেখতেই তো আমরা বেশি অভ্যস্ত, তাই না। কিন্তু, যদি দেখেন একদিকে অস্ত্রোপচার হচ্ছে, আর একদিকে গিটার বাজিয়ে বিটলস গাইছেন রোগী, তাও ব্রেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অস্ত্রোপচারের সময়, কেমন লাগবে ? নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারবেন কি ? তবে জানিয়ে রাখি, বিশ্বাস আপনাকে করতেই হবে।
এ অসাধ্যসাধনই করছে আজকের যুগের চিকিৎসাব্যবস্থা। অসম্ভবকে সম্ভব করছেন চিকিৎসকরা। প্রায় বিরল এ অস্ত্রোপচার করেছেন ব্রাজ়িলের সান্তা ক্যাটারিনার নোসা সেনহোরা দা কনসেইকাও হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকেরা।
অস্ত্রোপচার কেন ?
অ্যান্থনি কুলকাম্প ডায়াস। বয়স ৩৩ বছর। ব্যাঙ্ক কর্মী। গিটারও বাজান। বছর ২০ ধরে গিটার বাজাচ্ছেন। দিন ১৫ আগে তিনি লক্ষ্য করেন, তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর পর ধরা পড়ে, ব্রেনে টিউমার রয়েছে তাঁর। অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা।
অস্ত্রোপচারের দিন
সবকিছু রেডি। চিকিৎসকরা অপারেশনের সময় ডায়াসকে অজ্ঞান করলেন না। বরং বললেন গিটার বাজিয়ে তাঁদের শোনাতে। তারপরই দেখা গেল সে অবিশ্বাস্য দৃশ্য। গিটার বাজিয়ে কখনও বিটলস্-এর “ইয়েসটারডে” গাইছেন ডায়াস। কখনও গাইছেন নিজের সদ্যোজাত ছেলের জন্য লেখা ইমানুয়েল। কখনও আবার অন্যকিছু। গানের ফাঁকে ফাঁকে কথাও বলছেন। অস্ত্রোপচার করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা
এও কি সম্ভব !
চিকিৎসকরা জানালেন সম্ভব। কিন্তু কেন ? উত্তর এল, ব্রেনে অপারেশনের সময় রোগীকে জাগিয়ে রাখলে, কথা বলালে, তাঁর ব্রেন কীভাবে কাজ করছে তা রিয়েল টাইমে বোঝা যায়। শুধু তাই নয়, অপারেশনের সময় ব্রেনের কোনও অংশে অনাহূত আঘাত লাগলে তা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া যায়। রোগীকে অজ্ঞান করে অপারেশন করলে রিয়েল টাইমে তা বোঝা সম্ভব নয়। রোগী জেগে আছেন, এমন সময়ে মস্তিষ্কে অপারেশন করলে স্নায়ুর সেনসরি, মোটর ও স্পিচ এরিয়ায় কোনও আঘাত প্রতিরোধ চটজলদি করা সম্ভব। এড়ানো যায় ভবিষ্যতের কোনও ঝুঁকি।
হাসপাতালের ক্লিনিকাল ডিরেক্টর জানিয়েছেন, চিকিৎসার পরিভাষায় এ ধরনের অস্ত্রোপচারের নাম সেরিব্রাল মনিটরিং অপারেশন। এটা নতুন নয়। এতে ঝুঁকির সম্ভাবনা একটা থাকলেও সফল হওয়া যায় প্রায় ১০০ শতাংশ। আরও জানালেন, এই হাসপাতালে ডায়াসের আগেও এ ধরনের অপারেশন হয়েছে। সংখ্যার হিসেবে ১৯ টি এ ধরনের অপারেশন হয়েছে হাসপাতালে।
অপারেশনের সময় যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন না রোগী ?
ক্লিনিকাল ডিরেক্টর জানিয়েছেন, “আমাদের দেহের ত্বক বা অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যন্ত্রণার অনুভূতি থাকলেও ব্রেন টিসুর তা থাকে না। তাই অপারেশনের সময় যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেন না রোগী।” শুধু তাই নয়, এ ক্ষেত্রে অ্যানাস্থেসিয়া যিনি করেন, তাঁর ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে জানিয়ে রাখি, বাড়ি ফিরে গেছেন ডায়াস। দিব্যি সুস্থ তিনি। কথাও আর জড়িয়ে যায় না।