সাজিয়া জান্নাত নামের শিশুটির বয়স যখন চার মাস তখন তার মা প্রথম তার নাভির পাশে একধরনের শক্ত চাকা অনুভব করেন।
এরপর ধীরে ধীরে সেটি বড় হতে থাকে।
পরে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় শিশুটির পেটের ভেতর ভ্রূণের বিষয়টি জানা যায়।
শিশুটির বয়স এখন ৬ মাস ২৭ দিন। সে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসকরা বলছেন, তার শরীরের ভেতরে থাকা ভ্রূণটির বয়স ২২ সপ্তাহের মত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রর ডা: সিফাত জেরিন খান বিবিসি বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শিশুটির বাড়ি জামালপুরে। জামালপুর থেকে শিশুটিকে গত মার্চ মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়।
ডা: সিফাত খান বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল হলেও বাংলাদেশে একেবারে প্রথম তেমনটি নয়।মায়ের পেটে যমজ বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। কিন্তু পরে একটি বাচ্চার পরিপূর্ণ গঠন ও বিকাশ হলেও আরেকটি বাচ্চা পুরোপুরি বেড়ে ওঠেনি।
তিনি বলছেন, “এই সমস্যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় বলা হয়, ফিটাস ইন ফিটু। এর অর্থ হলও, মায়ের পেটে যমজ বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। কিন্তু পরে একটি বাচ্চার পরিপূর্ণ গঠন ও বিকাশ হলেও আরেকটি বাচ্চা পুরোপুরি বেড়ে ওঠেনি। যে বাচ্চাটির গঠন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই বাচ্চাটি আম্বিলিকাল কর্ডের মাধ্যমে পুরোপুরি বেড়ে ওঠা বাচ্চাটির শরীরের ভেতর চলে যায়। কিন্তু এর বিকাশ বা গঠন সেখানেই থেমে থাকে”।
এখন শিশুটির শরীরের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই ভ্রূণটি বের করে আনার প্রস্তুতি চলছে। এজন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
চিকিৎসক সিফাত খান বলছেন, “স্বাভাবিকভাবে ২২ সপ্তাহের মধ্যে একটি ভ্রূণের মাথার খুলি, হৃৎপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকমত তৈরি হয়ে যায়।
কিন্তু এই ভ্রূণটি যেহেতু অস্বাভাবিক ভ্রূণ ছিল ফলে এর মাথার খুলি, হৃৎপিণ্ড তৈরি হয়নি। কিন্তু হাত-পায়ের হাড়, মেরুদণ্ড, মেরুদেন্ডের হার ইত্যাদি তৈরি হয়ে গিয়েছিল”।
এ কারণে সাজিয়ার নিজের শারীরিক গঠন ও বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে জানান ডা: সিফাত।
এছাড়া তার লিভারের একপাশে ভ্রূণটির অবস্থান হওয়ায় তার জন্ডিস দেখা দিয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বুধবার শিশুটির অপারেশনের কথা থাকলেও তার ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাও রয়েছে।
জন্ডিস ও ঠাণ্ডার সমস্যা ভাল হলে আগামী সপ্তাহে তার শরীরে অস্ত্রোপচার করে ভ্রূণটি বের করে আনার চিন্তা করা হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে বাচ্চাটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন চিকিৎসকরা।