আপনিও কি শাহরুখের মতো ধূমপান ছাড়তে চাইছেন? তা হলে জেনে নিন এতে শরীরের কী কী লাভ হবে।
ধূমপান ছেড়ে নাকি ভাল আছেন শাহরুখ, এতে শরীরে কী কী বদল আসবে?
দিনে চার প্যাকেট সিগারেট ছাড়া চলতই না, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন শাহরুখ খান। আব্রাহাম আসার পরে নাকি শাহরুখ ভেবেওছিলেন, তিনি সিগারেট আর মদ খাওয়া ছেড়েই দেবেন। কিন্তু তা আর হয়নি। ধূমপানের নেশা থেকে বেরোতে পারেননি। শুধু তাই নয়, ধূমপানে এমন আসক্তির কারণে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কেও জড়াতে হয়েছে বলিউড বাদশাকে। ‘ধূমপান নিষেধ’ লেখা জায়গায় ধূমপান করে শাহরুখ ধরাও পড়েছেন। এ বছর আইপিএলে কেকেআরের প্রথম ম্যাচ ইডেন গার্ডেন্সের বিশেষ বক্সে বলিউড বাদশাকে ধূমপান করতে দেখে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।
ঘন ঘন ধূমপানে অভ্যস্ত তিনি। কালো কফি, কবাব আর সিগারেটই নাকি তাঁর ডায়েট। এ ভাবেই চলছে বছরের পর বছর। যদিও মাঝে একবার শাহরুখ বলেছিলেন যে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করছেন তিনি। অবশেষে ৫৯ বছরে জন্মদিনে বলিউড বাদশা ঘোষণা করেছেন তিনি পাকাপাকি ভাবে ধূমপান ছেড়ে দিলেন। শাহরুখের কথায়, “ধূমপান ছেড়ে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হচ্ছিল। ভাবছিলাম পারব কি না। কিন্তু এখন দেখছি বেশ ভাল লাগছে।”
আপনিও কি শাহরুখের মতো ধূমপান ছাড়তে চাইছেন? তা হলে জেনে নিন এতে শরীরের কী কী লাভ হবে?
ধূমপান ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে
ধূমপান ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে আমূল পরিবর্তন আসতে থাকে এমনটাই মত মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশ তালুকদারের। ধূমপান ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। শরীরে জমে থাকা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে গিয়ে শরীরের ‘টক্সিন’ দূর হয়। পাশাপাশি, ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করে। শরীরে অক্সিজেন প্রবাহের মাত্রাও বাড়ে।
ফুসফুসের শক্তি বাড়বে
শ্বাসনালি প্রসারিত হবে। শ্বাসপ্রশ্বাসের হার স্বাভাবিক হবে। ধূমপানের কারণে শ্বাসনালির যে ক্ষতি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে মেরামত হতে শুরু করবে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে অল্পেই হাঁপিয়ে ওঠা, ঘন ঘন সর্দি-কাশি হওয়ার সমস্যাও দূর হবে।
স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে
চিকিৎসকের কথায়, সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। কেবল তা-ই নয়, ধূমপানের কারণে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে গিয়ে হার্টের যে ক্ষতি হয়েছিল তা-ও সারতে থাকবে ধীরে ধীরে। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে।
বন্ধ্যত্বের সমস্যা দূর হবে
ধূমপানের ফলে স্পার্ম কাউন্ট কমে, হরমোনের সমস্যা দেখা দেয়। ‘স্পার্ম মোবিলিটি’, ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’-এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। মহিলাদের মধ্যেও ধূমপানের কারণে বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। ধূমপান ছেড়ে দিলে এই সব সমস্যা থেকে রেহাই মিলতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ জীবনযাপন করতে ধূমপানের অভ্যাস জীবন থেকে বাদ দেওয়া একান্তই জরুরি। তবে আজকে ধূমপান বন্ধ করে দিলে কাল থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ধূমপানের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগাযোগ নিবিড়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল অধূমপায়ীদের তুলনায় খারাপ। আর যাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল ভাল নয়, অর্থাৎ মানসিক চাপ, উদ্বেগে ভোগেন, তাঁরা চাইলেই সহজে ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন না। ধূমপান ছাড়তে হলে সবার আগে জীবনধারায় বদল আনতে হবে। ধূমপান ছাড়তে চাইলে ডায়েটে বেশি করে ফলমূল ও শাকসব্জি খেতে পারেন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। বিশেষ করে যোগাসন, প্রাণায়ামের অনুশীলন বেশি করে করতে পারেন। নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস ধূমপান করা থেকে আপনাকে বিরত রাখবে।