১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২০১৯ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ও শতভাগ স্যানিটেশন

লন্ডনে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ও শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হবে। এটা হচ্ছে মহান নেতা মহাত্মা গান্ধীর একশ পঞ্চাশ তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আমার সকারের অঙ্গীকার।

২০১৯ সালে গান্ধীর ১৫০তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপনকে সামনে রেখে তার সরকারের দু’টি লক্ষের কথা তিনি অবহিত করেন প্রবাসী ভারতীয়দের।

তিনি বলেন, দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করা ও ২৪ ঘণ্টা বিজলিবাতি সকলের জন্য নিশ্চিত করাই আমার সরকারের অঙ্গীকার।

তিনি আরো বলেন, ভারতে হাজার হাজার গ্রামে বিদ্যুতের এখন পর্যন্ত একটি খুঁটিও পৌঁছেনি। প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দেশের যে যেখানের বাসিন্দা সেখানে টয়লেট তৈরি করে দিন, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করুন।’

এসময়ে মোদী বলেন, আমি নবায়ন বিজলির মহা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। ভারত হবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দেশ।

যুক্তরাজ্যে প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধায় ওয়েস্ট লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি ফুটবল স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায়ে ভাষণদানকালে মোদী এসব কথা বলেন।

লন্ডনের ইতিহাসে এই তৃতীয়বার কোনো ভিন দেশের নেতা  কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য রাখলেন। এসময়ে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরুন মোদির সাথে মঞ্চে আসেন এবং ভাষণ দেন।

এর আগে নেলসন মান্ডেলা ও জন পোপ বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এই ফুটবল স্টেডিয়ামে ভাষণ দিয়েছিলেন।

ক্যামেরুন বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মাতৃগৃহ বৃটেনের পার্লামেন্ট- হাউস অব কমন্সে ভাষণ দেয়ায় আমরা গর্ববোধ করছি। প্রথমে তিনি মঞ্চে এসে হাজার হাজার ব্রিটিশ ভারতীয়দের উদ্দেশে বলেন- ‘নমস্তে ওয়েম্বলি! আমি যখন অল্প বয়স্ক ছিলাম তখন এমন ৫০ সহস্রাধিক  মানুষের সামনে  ব্রিটেনের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যায়ে এমন একটি মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার কথা  স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি কল্পনাও করতে পারিনি। ৬০ হাজার মানুষের হর্ষধনি অভিবাদনে অভ্যর্থনা গ্রহণের  অভিজ্ঞতা এর আগে কোনো ব্রিটিশ রাজনীতিবিদের সম্ভাবত হয়নি’

মঞ্চে মোদী বলেন, আমি যখন ২০০৩ সালে লন্ডনে এসেছিলাম ওই সময়ের চিত্র আর আজকের চিত্র ঠিক ঘড়ির কাটা উল্টে যাওয়ার ঘটনার মতই ঘটেছে। তখন ভারতীয়দের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল না বিদেশিদের কাছে। আর এখন বিশ্বের এমন কোনো শক্তি নেই ভারতকে উপেক্ষা করার সাহস রাখে।

অবশ্য ক্যামেরুন তার বক্তব্যে বলেছেন, ভারত-ব্রিটেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

ভারত-ব্রিটেন ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেড় মিলিয়ন ভারতীয় বংশদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক যুক্তরাজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় বংশদ্ভূত এমপি রয়েছেন।

এমনকি আমার সরকারের মন্ত্রী পরিষদেও ভারতীয় বংশদ্ভূত ব্রিটিশ রয়েছেন।

ক্যমেরুন বলেন, জাতিসংঘে ভারত যাতে স্থায়ী সদস্য পদ লাভ করতে পারে তার জন্য সুপারিশ সহ সবকিছুই করব।

লন্ডনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমিউনিটির চারশ’ সংগঠন এই জনসভার আয়োজন করে।

১৮ মাস আগে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে মোদীর নেতৃত্বে তার দল এক ভূমিধ্বস বিজয় লাভের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর ব্রিটেনে বৃহস্পতিবার প্রথম বার লন্ডন সফরে আসেন।

মোদী আরো বলেন, তার প্রধান লক্ষ হচ্ছে ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে পরাশক্তিতে পরিণত করা।

তিনি বলেন, ভারত শুধু বিদেশে পণ্য রফতানি করেনা। মেধাও বিনিয়োগ ও রফতানি করে। ভারতকে মহা সাগরের সাথে তুলনা করে মোদী বলেন, এর চার পাশের ছোট ছোট দ্বীপ একদিন মহাসাগরে তলিয়ে গেলে তার খবর কেউ রাখবে না।

স্টেডিয়ামের ভিতরে মোদী ভক্তরা যখন আনন্দে আত্মহারা তখন মোদী বিরোধীদের স্টেডিয়ামের বাইরে মোদীকে ‘কিলার, মানবতার শত্রু-দুশমন, রক্ত পিপাসু , প্রতিবেশী রাষ্ট্রের  জন্য আতঙ্ক , সাম্রাজ্যবাদী উল্লেখ করে কয়েকশ ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড প্রদর্শন করে এবং স্লোগান দিতে দেখা যায়। আজাদ কাশ্মির, শিখ সংগঠন, মানবাধিকার কর্মীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে কয়েকশত নারী পুরুষ ও শিশুদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এনিয়ে মোদি লন্ডনে আসার পর থেকেই তাকে প্রতিদিনই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।

অবশ্য লন্ডনে একাধিক কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করে বলেছেন, মোদী বিদেশে এসে উন্নয়নের যে ফিরিস্তি দিচ্ছে তা মিথ্যা ছাড়া সত্যের লেশ মাত্র নেই ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ