একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নাকি জীবনকে উপভোগ করা যায় না। কিন্তু ব্যাবেট হিউজ এমনটি মনে করেন না।
১০১ বছর বয়সের এই লেখিকা তাঁর নবম বই ‘লেসনস ইন এভিল’ প্রকাশ করেছেন। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে, তিন সন্তানের জন্ম, এবং ২৫ বছর পর অসুখী বিবাহের বন্ধন থেকে মুক্তি- ব্যাবেটের গল্প আটকে যেতে পারতো এখানেই। কিন্তু থেমে যাননি এই মার্কিন লেখিকা।
লেখালেখিতে যখন হাতেখড়ি, ব্যাবেটের বয়স ততদিনে পেরিয়েছে ৪০! অনেকের ক্ষেত্রে যখন জীবনের প্রতি সব উদ্দীপনা শেষ হয়ে আসে, তখনই যেন নতুন করে জীবন গড়তে শুরু করলেন তিনি।
আনন্দময়, দীর্ঘজীবন লাভের জন্য এখানে তার দেওয়া আটটি টিপস তুলে ধরা হলো-
হাল ছেড়ে দেবেন না
বয়স চল্লিশ বা পঞ্চাশ পেরোলে সমাজ-সংস্কৃতি আমাদের ওপর এক ধরণের সীমারেখা চাপিয়ে দেয়। খেয়াল করলে দেখবেন কেউ রঙিন কাপড় পরলে, ঘোরাঘুরি করলে, নিজের জন্য কিছু করলে আশেপাশের মানুষ বলতে শুরু করে, ‘ওনার কি এখন এসবের বয়স আছে!’ মনে রাখবেন, আপনার জীবন শুধুই আপনার। কারো কোনো কথা বা সমালোচনায় কান দেওয়া যাবে না। প্রতিটা মানুষের মধ্যেই কোনো না কোনো গুণ আছে। সেই গুণ বুঝতে কারও কারও গোটা এক জীবন লেগে যেতে পারে। তবু কখনো নিজের ওপর হাল ছেড়ে দেবেন না।
সব বয়সী বন্ধু থাকুক
একেক বয়সে মানুষের একেক রকম জ্ঞান বা পরিপক্বতা থাকে। মানুষের সঙ্গে মেশার সময় এটি মনে রাখবেন। যিনি বয়সে বড় তাঁর জীবনবোধ, জীবনের প্রতি দর্শন, অভিজ্ঞতা থেকে ছোটদের শেখার আছে অনেক। আবার যে বয়সে ছোট তার কাছেও রয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তি, কৌশল আর চলতি ধারার অফুরন্ত জ্ঞানভান্ডার। ব্যাবেট হিউজের বন্ধুতালিকায় তাই ‘কুড়ি থেকে বুড়ি’ সবাই আছেন। তিনি বলেন, সব বয়সের মানুষের সঙ্গে চলুন, নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলুন।
ছোট ছোট মুহূর্তে বাঁচুন
সাফল্য, অর্জন, স্বপ্ন এ শব্দগুলোকে আমরা খুব কঠিন বানিয়ে ফেলেছি। অথচ জীবনে সুখী হতে হলে খুব বড় প্রাপ্তির প্রয়োজন নেই। চাইলে ছোট ছোট মুহূর্তের মধ্যেও সুখ আর সফলতা আসতে পারে। বই পড়া, গান লেখা, বাগান করা, কাছের বন্ধুর সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলা- এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোও মানুষকে নিবিড় আনন্দ দিতে পারে। দীর্ঘায়ু লাভের জন্য এইটুকু আনন্দের বিকল্প নেই।
নিজেকে জানুন, নিজেকে গ্রহণ করুন
যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন, জীবন আপনাকে যে পরিস্থিতিতেই ফেলুক, নিজেকে গ্রহণ করে নিন। নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। যেদিকটা ভালো পারেন তার ওপর ফোকাস করুন। প্রয়োজনে সময় নিন।
নিজের পছন্দের কাজ করুন
লেখার সময় অন্যরকম শান্তি অনুভব করেন ব্যাবেট হিউজ। নিজেকে তখন তার দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়। তার পরিচিত অন্যান্য লেখকদেরও একই অনুভূতি হয় বলে জেনেছেন এই লেখিকা। নিজের পছন্দের সৃজনশীল কাজের মধ্যে একটা পরিতৃপ্তি আছে, যা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মন খুলে তাই নিজের পছন্দের কাজ করার পরামর্শ তাঁর।
ব্যায়াম করুন, মন শান্ত রাখুন
১০১ বছর বয়সে এসেও ১০ পাউন্ডের ভার বহনে সক্ষম ব্যাবেট। এমনকি কারও সাহায্য ছাড়াই মাটি থেকে চেয়ার তুলে ফেলতে পারেন! এর কারণ, নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস। গত ৭ বছর যাবত সপ্তাহে দুইদিন করে ওয়ার্কআউট করেন তিনি; রয়েছে নিজস্ব প্রশিক্ষক। আবার লেখার মাঝে পর্যাপ্ত বিরতি নিতেও ভুল হয় না তার। এটিই ব্যাবেট হিউজের সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র। বেশি করে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে করতে হবে, সাথে থাকবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম।
নেতিবাচক চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন
দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে নেতিবাচক চিন্তা এসে ভিড় করা খুবই স্বাভাবিক। ‘আমিই কেন’, ‘আমার সাথেই কেন’, দিনের পর দিন শুধু এমন নেতিবাচক ভাবনায় মশগুল হয়ে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে; চিন্তা করার প্রক্রিয়া, কর্মজীবন, এমনকি সৃজনশীলতাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতিবাচক চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে তাই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
যা করা প্রয়োজন, তাই করুন
শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার, সঙ্গীর সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক, নিজেকে বোঝা, সফল ক্যারিয়ার- দীর্ঘজীবন লাভের জন্য কী করা উচিত তা মোটামুটি আমাদের সবারই তো জানা! কিন্তু আমরা যা জানি এবং যা করি তার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। যেখানে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, সেটিই করার মত দিয়েছেন তাই ব্যাবেট।