চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত বাড়ছে হৃদরোগীর সংখ্যা। উদ্বেগের বিষয় হলো আক্রান্তদের ৪০ শতাংশের বেশি তরুণ বয়সী। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর একটি বড় অংশও আবার কম বয়সী। তবে বন্দরনগরীতে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সেই হারে বাড়েনি চিকিৎসা সুবিধা। গড়ে ওঠেনি হৃদরোগীদের জন্য বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল। এই অবস্থায় একমাত্র ভরসা সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। অনেক রোগীর ভরসার এই বিভাগটির অবস্থাও নাজুক। বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সত্ত্বেও মাত্র একটি ক্যাথল্যাব দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। কম বয়সীরা হৃদরোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর জন্য খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের তথ্যমতে, বিভাগে প্রতিদিন ভর্তি থাকা ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে একটি বড় অংশই কম বয়সী। চলতি বছরের এ পর্যন্ত বিভাগে ১৩ হাজার ৪৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি কম বয়সী। এ ছাড়া ৪০ বছরের ওপরেও একটি অংশ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় হাসপাতালে। এ সময়ে মৃত্যু হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৩। যার মধ্যে একটি অংশ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। চলতি বছর শুধু হৃদরোগ বিভাগেই ৯ হাজার ৮২০ জন রোগীর ইসিজি পরীক্ষা করানো হয়েছে। ইকো পরীক্ষা করা হয়েছে ৫ হাজার ১৯৫ জনের।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভরসার হৃদরোগ বিভাগটি মাত্র একটি ক্যাথল্যাবের ওপর ভর করে চলছে। দুই শতাধিক রোগীর ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। যে কারণে অনেককে বাধ্য হয়ে মেঝেতে শুয়ে-বসে চিকিৎসা নিতে হয়। প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন দুই শতাধিক রোগী। ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগীর এনজিওগ্রাম, পেসমেকার বসানো ও হার্টে রিং পরানোর প্রয়োজন পড়ে। তবে এখানে গড়ে প্রতিদিন ১০ জনের বেশি রোগীকে একমাত্র ক্যাথল্যাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হয় অসহায়-গরিব রোগীদের।
চিকিৎসকদের মতে, হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভালভ (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রে রক্তের চাপ বুঝতে ক্যাথল্যাবে রোগীকে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। ক্যাথল্যাবের অভাবে প্রতিদিন চাইলেও অপেক্ষমাণ থাকা অনেক রোগীকে সেবা দিতে পারেন না চিকিৎসকরা। চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে বেশ কিছু হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসাসেবা দিলেও অতিরিক্ত খরচের কারণে গরিব-অসহায় রোগীরা সেখান থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন না।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে বলেন, বর্তমানে তরুণ বয়সীদের হৃদরোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু একটি বড় অংশও আবার কম বয়সী। কয়েক বছর আগেও এখনকার মতো কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী আসত না ওয়ার্ডে। এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক রোগী এখানে ছুটে আসে। এতে কয়েক গুণ বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। একটি বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতাল থাকলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ১৭ ভাগই হৃদরোগের কারণে। হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয়। কালক্ষেপণে মৃত্যু ডেকে আনে। এজন্য চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি চিকিৎসা সুবিধা থাকলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো যেত। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস, অসচেতনতা, ধূমপান হৃদরোগের বড় কারণ। হার্ট ভালো রাখতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার বাড়ানো, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন, শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়।
আজ রোববার বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে হৃদরোগ বিভাগসহ বিভিন্ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।