হার্ভের ত্রাস কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এখন ইরমা আতঙ্ক কাঁপাচ্ছে ফ্লোরিডাকে। যেকোন মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে ফ্লোরিডা সহ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বেরও বেশ কিছু অংশ। গৃহহীন হতে পারেন এক লক্ষের কাছাকাছি মানুষ। মৃত্যুর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ইরমার দাপটে এত বড় বিপর্যয় আসতে চলেছে, যা ফ্লোরিডার মানুষ আগে কখনও দেখেন নি।
সম্প্রতিই আমেরিকার টেক্সাস এবং লুইজিয়ানার উপরে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় হার্ভে। ক্যাটগরি-৩ এর এই ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে মৃত্যু হয় ৫০ জনের। ভেঙে পড়ে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার বাড়ি। ৯ হাজার বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হার্ভে হামলার ঠিক পরেই গত বুধবার আবহবিদেরা পূর্ব অতলান্তিকে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় কুন্ডলী পাকাচ্ছে বলে চিহ্নিত করেন। খুব দ্রুত এই নতুন ঘূর্ণিঝড় আরও বড় আতঙ্কের চেহারা নেয়।
ক্যাটেগরি-৩ থেকে যা ইতিমধ্যে ক্যাটেগরির-৫ এর রূপ নিয়েছে বলে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন। শুক্রবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আছড়ে পড়ে ওই ঘূর্ণিঝড় ইরমা। তখন তা ছিল ক্যাটেগরি-৪। সেখানে ধ্বংসলীলা চালানোর পর ফ্লোরিডার দিকে রওনা দিয়েছে ইরমা। আবহবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৭০ কিলোমিটার গতিবেগে রবিবার সকালেই তা আছড়ে পড়তে চলেছে ফ্লোরিডায়। পূর্বাভাস পেয়েই ফ্লোরিডা জুড়ে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।
আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস সূত্রে খবর, স্থানীয় সময় রাত ২টো নাগাদ ইরমার অবস্থান ছিল কিউবার শহর ক্যাবারিয়েন থেকে ১৩৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং মিয়ামি থেকে ৪৪০ কিলোমিটার দূরে। গতিবেগ ২৬০ কিলোমিটার। সময় যত এগোচ্ছে আরও শক্তিশালী হচ্ছে ইরমা। ফ্লোরিডায় আছড়ে পড়ার পর তা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।
ইরমায় লাল সতর্কবার্তা জারি হওয়ার পরই বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে প্রশাসন। ফ্লোরিডার ৫৬ লক্ষ মানুষকে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের ইরমা সম্পর্কে সতর্ক করতে হেলিকপ্টার করে লিফলেট ফেলা হচ্ছে। ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট জানিয়েছেন, ইরমার তাণ্ডব শুরু হয়ে গেলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো যাবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে বাসিন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগেভাগেই তাই বাড়ির জানলা-দরজা কাঠের টুকরো লাগিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। ঘরে জমাচ্ছেন বালির বস্তা। অনেক বেশি করে খাবার এবং জল সংগ্রহ করে রাখছেন তাঁরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিমানের ওঠানামাও। শহরের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলিকে ত্রাণ শিবির হিসাবে কাজে লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্লোরিডা সরকার। এই সমস্ত শিবিরে মজুত রাখা হবে জীবনদায়ী ওষুধ। ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকবেন চিকিৎসক। আমেরিকার হারিকেন সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর মার্ক ডিমারিয়া জানান, এখনও পর্যন্ত ইরমার অভিমুখ ফ্লোরিডার দিকেই। মুখ ঘোরানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে দক্ষিণ ফ্লোরিডার উপর দিয়ে ইরমার সবচেয়ে ভয়ানক অংশটি যাবে।