অনেক সময় শোক সংবাদে শোনা যায় মি. রহিম অথবা মি. করিম হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। আসলে এই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া কি? শরীরের যতগুলো অরগ্রান আছে যেমন লিভার, কিডনি, চোখ, ব্রেইন, হাড়, পাকস্থলী প্রত্যেকটি অঙ্গের খাবার সরবরাহ করে হৃৎপিণ্ড এবং হৃৎপিণ্ড নিজে খাবার নেয়, হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি যার নাম করনারি আর্টারির মাধ্যমে। হৃৎপিণ্ড মাংসপেশি দ্বারা তৈরি, এই মাংশপেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন ও নিউট্রেশন সরবরাহ করে থাকে।
হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি তখনই সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে, যখন মাংসপেশি গুলি সুস্থ থাকে, আর সুস্থ থাকতে গেলে মাংসপেশি গুলোকে পরিমাণ মতো অক্সিজেন ও নিউট্রেশন পেতে হবে। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি অক্সিজেন ও নিউট্রেশন পায় করনারি আর্টারির মাধ্যমে। যদি করনারি আর্টারির মধ্যে চর্বি জমে করনারি আর্টারির পথ সরু বা চিকন করে দেয়, অথবা করনারি আর্টারি (রক্তনালি) পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তখন, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও নিউট্রেশন পায় না। তখন হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিগুলো অক্সিজেন ও নিউট্রেশনের জন্য চিৎকার করতে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ কোনো শিশুকে যদি খাবার না দেওয়া হয়, তখন সেই শিশু ক্ষুধার কারণে চিৎকার ও কান্নাকাটি করতে থাকে। অনুরূপভাবে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি কথা বলতে পারে না, তখন সে খাবারের জন্য চিৎকার করতে থাকে। এই চিৎকারটাই হলো বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি, ইত্যাদি। হার্ট অ্যাটাক হলো সেই রোগ, যখন হৃৎপিণ্ডের করনারি আর্টারি বন্ধ হওয়ার জন্য যে, বুকে ব্যথা হয়, বমি হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, তাকেই হার্ট অ্যাটাক বলে।
যদি কোনো রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়, তখন করণীয় কি? অনেক রোগী আছেন বুকে ব্যথা হলে গ্যাস্ট্রিক চিন্তা করে অ্যান্টাসিড সিরাপ অথবা রেনিটিডিন অথবা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ সেবন করে বুকের ব্যথা কমে কিনা সময় নষ্ট করতে থাকেন। এটা কখনো উচিত নয়। বুকে ব্যথা অনুভব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন এবং রোগীর সুস্থতা লাভ করার পর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য করনারি এনজিওগ্রাম করে স্টেনটিং অথবা বাইপাস সার্জারির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রশ্ন আসতে পারে প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থতা লাভের পরে এনজিওগ্রামের প্রয়োজনীয়তা কি? এনজিওগ্রামের প্রয়োজনীয়তা হল হৃৎপিণ্ডের করনারি রক্তনালিতে কতগুলো ব্লক আছে সেটা নির্ধারণ করা।