[english_date]

স্বাস্থ্যসেবা অধিকার-বঞ্চিত হিজড়ারা

রাষ্ট্রের নাগরিকের মৌলিক অধিকারের অন্যতম স্বাস্থ্যসেবা। ২০০৯ সালে নাগরিকের স্বীকৃতি মিললেও, এখনও এ সেবা থেকে বঞ্চিত হিজড়া জনগোষ্ঠী। অসুস্থ হলে একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা যান তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক গোঁড়ামিই চিকিৎসাসেবার মত মানবিক অধিকার থেকে অস্পৃশ্য করে রেখেছে তাদের।
হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হন পাহাড়ী। শরীরের এক পাশের হাত-পা অবশ হয়ে গেছে তার। এখনই প্রয়োজন চিকিৎসার। কিন্তু, তার ঘরে যে আসবেন না চিকিৎসক, পাওয়া যাবে না অ্যাম্বুলেন্সও। পাহাড়ীকে বাঁচাতে হলে, নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। ধরাধরি করে তাই একটা রিকশায় ওঠানো হলো তাকে। কোন হাসপাতালে মিলবে চিকিৎসা- জানেন না তার ডেরার বোনেরা। শেষ পর্যন্ত পাহাড়ীকে বাঁচাতে পারেননি তারা।

বলছি সমাজের চোখে যারা মানুষ নয়, প্রকৃতির এমন খেয়ালী সৃষ্টি মানুষদের কথা। প্রান্তিকতারও প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা অধিকাংশ হিজড়ার বসবাস নোংরা বস্তিতে। শরীরের অসম্পূর্ণতা তাকে যতটা না অসহায় করেছে, তার চেয়ে বেশি অসহায় সে, জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয় ওষুধ আর চিকিৎসার অভাবে।  কয়েকজন হিজড়া বলেন, ‘আমরা চিকিৎসার জন্য গেলে ট্রিটমেন্ট ছাড়াই ওষুধ দিয়ে দেয়, এতে রোগ আরও বাড়ে। ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গেলে বলে ওষুধ নাই।’ 

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসা সেবা কখনোই লিঙ্গ বা সমাজের অবস্থাভেদে নির্ধারিত হয় না। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘একজন হিজড়ার চিকিৎসায় অনাগ্রহ দেখানো কিংবা ব্যাঘাত সৃষ্টি করার সুযোগ চিকিৎসকের নেই।’

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ‘সমাজে আমরা হিজড়াদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে তাদের আরও ছোট করে দেই। এসবের ফলেই এ ব্যাপারগুলো আরও বেশি ঘটছে।’ এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান সমাজকল্যাণ সচিব। 

সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির বলেন, ‘মূলধারার সকল চিকিৎসাকেন্দ্রেই তাদের অবাধ সুযোগ থাকবে। আমরা এর লক্ষ্যেই কাজ করছি।’  সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাস করা একজন হিজড়া যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন ন্যূনতম মানবিক অধিকার, চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।  বিশেষজ্ঞদের মতে, হিজড়াদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে তাদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ দরকার বলে মনে করেন তারা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ