সোমবার শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বললেন, এবারের মেলা হবে এ যাবত্কালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সবচেয়ে বড় বইমেলা। সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশের ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজিত মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তেসরা ফেব্রুয়ারি মেলার অংশ হিসাবে উদ্বোধন হবে আন্তর্জাতিক কবিতা উত্সব।
বইমেলা উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে শামসুজ্জামান খান বলেন, বইমেলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সৌন্দর্যবৃদ্ধির দিকে। মেলায় আসা পাঠকরা যাতে সুন্দর পরিবেশ পান সেজন্য আয়তন বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু এর আগে বইমেলার কাছে দুজন লেখক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তাই এবার নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। পর্যাপ্ত আলোসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজিরবিহীন নিরাপত্তা থাকছে বইমেলাকে ঘিরে।
এবারের মেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’। গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি ২টি অধিবেশনে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন এবং মেলার মূল মঞ্চ ‘নজরুল মঞ্চে’ অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক কবিতা উত্সব। এতে বাংলা ও বিশ্বকবিতা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্লোভাকিয়া, মরক্কো, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজন্মের কবিবৃন্দ কবিতা পাঠ করবেন। মেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, একাডেমি প্রকাশিত অভিধান বিক্রয়কেন্দ্র, একাডেমির শিশুকিশোর প্রকাশনাভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্র এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে।
মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এবার চারুকলা অনুষদ থেকে টিএসসির সামনের রেস্টুরেন্ট ডাস হয়ে দোয়েল চত্বর পুরো এলাকা সিসি টিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে। এর আগের বছরগুলোতে যেখানে ৬০টি সিসি টিভি ব্যবহার করা হতো সেখানে এবার প্রায় ২৫০ সিসি টিভি ব্যবহার করা হবে। থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার। সেই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের পুরো এলাকায় উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা করা হবে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না। টিএসসির দিকে র্যাবের একটি ক্যাম্প থাকছে। মেলার অন্যান্য প্রান্তেও র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্প থাকছে। শামসুজ্জামান খান বলেন, প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থারসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। এলাকাজুড়ে দু শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। দুটি স্টল-ওয়ারি একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকবেন। মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মত্স্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চানখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।
মেলার বিন্যাস ও সাজসজ্জা
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের মেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট; মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫১টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সজ্জিত করা হয়েছে। গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে। এবারই প্রথম সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে।
মেলার অংশ হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চ ‘নজরুল মঞ্চে’ অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে একাডেমির ইতিহাস এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড, অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ঐতিহাসিক ৬ দফার সুবর্ণজয়ন্তী এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।