১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া বাড়ছে, বাড়ছে চালকদের  দৈনিক জমার পরিমাণও

আগামীকাল থেকে ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া বাড়ছে। বর্ধিত ভাড়ায় প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ২৫ টাকা। দুই কিলোমিটারের পরে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা। এরপর প্রতি মিনিট বিরতির জন্য গুণতে হবে ২ টাকা করে, আগে যা ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা। ভাড়া বাড়ানোর সঙ্গে বাড়ছে চালকদের জন্য দৈনিক জমার পরিমাণও। মালিকের জমা বাবদ প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা করে দিতে হবে চালককে, আগে যা ছিল ৬০০ টাকা।
এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় নানাজন মন্তব্য করছেন। রেজাউর রহমান রিজভী লিখেছেন- আগামীকাল থেকে সিএনজি’র ভাড়া বাড়ছে। যে পরিমাণ ভাড়া বাড়ছে তাতে সিএনজি যাত্রীদের স্বস্তি পাবার কোনই কারণ নেই। কারণ এখন যে দূরত্বের জন্য মিটার ছাড়াই সিএনজিওয়ালারা ১৫০/২০০ টাকা ভাড়া দাবি করেন, তখন মিটারেই সেই টাকা (কম-বেশিও হতে পারে) উঠবে। তবে এসবের বাইরেও বড় প্রশ্ন হলো, প্রাইভেট লেখা+মিটারবিহীন সিএনজিগুলো তখন কি রেটে ভাড়া আদায় করবে? এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোন ভাবনা আছে বলে তো মনে হয় না। কারণ “সংশ্লিষ্ট” ব্যক্তিরা তো গাড়িতেই চলাফেরা করেন, সিএনজিতে ওঠার তো তাদের প্রয়োজনই নেই!
ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, ঢাকায় বাস-মিনিবাস, চালক-মালিকদের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্যে যাত্রীদের অবস্থা যখন নাকাল, তখন আরেক দফা ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের সঙ্গে রীতিমতো তামাশা শুরু হচ্ছে (রোববার থেকে)। গণপরিবহনের এই নৈরাজ্য নিয়ে খোদ সড়ক পরিবহনমন্ত্রীও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সরকারের কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না। ঢাকায় চলাচলরত সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা চলছে বছরের পর বছর। ঢাকায় কোনো অটোরিকশাই আর মিটারে চলে না, যাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী যেতে চায়না চালকরা, মিটার ছাড়াই ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকেন, নানা অজুহাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ বা তারও বেশি ভাড়ায় যাত্রীদের চলতে বাধ্য করেন। এসব অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে। এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আবার মালিকদের চাপে কাল রোববার থেকে ৭০ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে। যদিও বর্ধিত ভাড়ার অঙ্ক নির্ধারণ নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, গণপরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় পরিবহন যানের মূল্য, রেজিস্ট্রেশনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ, চালকের পারিশ্রমিকের উপর ভিত্তি করে। ঢাকায় এখন যে সব অটোরিকশা চলছে সেগুলোর মধ্যে ৫ হাজার অটোরিকশার মেয়াদকাল (ইকোনোমিক লাইফ) ২০১৩ সালে শেষ হয়ে গেছে। বাকী ৭ হাজারের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। শুরুতে এই অটোরিকশাগুলোর ভাড়া ও জমা নির্ধারণের সময় এগুলোর মেয়াদ শেষে ‘সেলবেজভ্যালু’ ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। ভাড়া ও জমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নতুন করে এগুলোর এই মূল্য বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে করে বর্ধিত ভাড়ার হার অনেক বেশি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, একটা গাড়ির মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পরে এতো বেশি ভাড়া ও জমা হতে পারে না। এ নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু বিআরটিএ মালিকপক্ষের স্বার্থটাই বেশি দেখেছে। শ্রমিক ও যাত্রীর স্বার্থ দেখেনি। জাকির হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রোববার থেকেই ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়ে যাবে। যাত্রী ও চালকদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ-বাদানুবাদ হবে। দু’একদিনের মধ্যেই তা বড় আকার ধারণ করতে পারে। এর স্বপক্ষে তার যুক্তি হলো, ৬শ’ টাকা জমার স্থলে ৯শ’ এবং কেউ কেউ ১২শ’ টাকাও জমা নিয়ে আসছেন। ৯শ’ টাকার জমা এরই মধ্যে ১৫শ’ টাকা নির্ধারণ করে ফেলেছেন কোনো কোনো মালিক। এটা বেড়ে ১৭/১৮শ’ টাকাও হতে পারে। মিটারে গেলে এই বাড়তি টাকা চালকরা কোথায় পাবে?

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ