ঢাকার শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের আঘাতে চোখ হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেতে যাচ্ছেন। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) তার চাকরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান নিজেই।
তিনি বলেন, গত ২৮ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তাকে ফোন করেন। মন্ত্রী তার শরীরের খোঁজ-খবর নেন। এ সময় মন্ত্রী ইডিসিএলে তার চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
সিদ্দিকুর বলেন, আমি ইডিসিএলে’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমার বায়োডাটা নিয়ে অফিসে যেতে বলেন। এরপর সেখানে গেলে আমাকে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত টেলিফোন অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
সিদ্দিকুর আরও বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর আমার যোগদানপত্র দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আমার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে প্রতিষ্ঠান থেকে সকল সহযোগিতারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।এদিকে সিদ্দিকুর সরকারি চাকরি পাওয়াতে তার পরিবারের মধ্যে আনন্দ বয়ে এনেছে। সন্তানের সরকারি চাকরিতে অনেক খুশি মা সুলেখা খাতুন। তিনি বলেন, সরকার আমার ছেলেটারে চাকরি দিয়া নতুনভাবে বাঁচার রাস্তা তৈরি করছে। শত কষ্টের মধ্যেও আমাদের সবার মুখে হাসি ফুটছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। ২০ জুলাই শাহবাগে আন্দোলনের সময় পুলিশের টিয়ার শেলে সিদ্দিকুর রহমান চোখে আঘাত পান। প্রথমে সিদ্দিকুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ২৭ জুলাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়। এখন তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। সিদ্দিকুর আহত হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতেই সিদ্দিকুরের দুই চোখে জখম হয়। তখন পুলিশ জানায়, শিক্ষার্থীদের ছোড়া ফুলের টবের আঘাতে সিদ্দিকুর আঘাতপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি পুলিশ ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে। এ নিয়ে চার দিকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ঘটনা তদন্তে ডিএমপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের আঘাতেই সিদ্দিকুরের চোখ আহত হয়েছে বলে উঠে এসেছে। ওই ঘটনায় একাধিক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কথা বলা হয়েছে। পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দুই কর্মকর্তাসহ সাত পুলিশ সদস্যকে দায়ী করা হয়েছে।