সরকারি চাকরিতে ‘আবেদন ফি’ তুলে দিচ্ছে সরকার। এর ফলে প্রায় ৬ কোটি বেকারের চাকরির আবেদন ফি লাগবে না। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে আদেশ জারি হবে। এছাড়া আবেদনকারীদের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে মাত্র এক পৃষ্ঠার আবেদনপত্র করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশের বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে সরকারি চাকরির আবেদনে কোনো টাকা নেবে না সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরিতে আবেদন তুলে দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নানা খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বেকারদের কাছে আবেদন ফি বাবদ যে টাকা জমা হয়, তা না হলেও চলবে। এ আদেশ জারি হলে লাখ লাখ বেকার যুবককে চাকরির আবেদনের সঙ্গে পোস্টাল অর্ডার, পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট সংযুক্ত করতে হবে না।
বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের আবেদনপত্রে জন্য মোবাইলে ৫শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে, প্রথম শ্রেণীর পদের জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য ১০০ থেকে ৫টাকা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আবেদন ফি ৫০০-১০০ টাকা ও ব্যাংকের আবেদনে ৩০০টি নেয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন ফি নিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাকরির আবেদনে পোস্টাল অর্ডার, পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট সংযুক্ত করার বিধান রহিত করার বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
রেলপথসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিপূর্বে ডাক বিভাগ ও খাদ্য অধিদফতরে প্রার্থীদের দেয়া টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আত্মসাৎ করা নিয়ে মামলাও হয়েছিল। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদফতর এবং রেলওয়েতে চাকরি প্রত্যাশীদের তিন লাখ আবেদন এখনো বিবেচনা করে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০০৪ সাল থেকে এসব আবেদন পড়ে আছে। আর আবেদনপত্রের সঙ্গে যুক্ত ১০০ টাকার পোস্টাল অর্ডারের ভাগ্যে কী হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। এসব কারণে আবেদন ফি তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চাকরির আবেদন ফি সরাসরি ফান্ডে জমা পড়ে। চাকরির জন্য লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষার ব্যয় অন্য ফান্ড থেকে মেটানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ আবেদন ফি থেকেই অর্থ ব্যয় হয় না। তাছাড়া দেখা গেছে, কোনো একটি পদে ৫০ জন নেয়ার কথা। এর বিপরীতে ২ হাজার আবেদন জমা পড়ে। লিখিত পরীক্ষায় ৩শ’ থেকে ৫শ’ জন পাস করে। বাকিরা ভাইভার আগে বাদ পড়েন। চাকরি পাওয়ার চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার জন্য তাদের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। এসব বিষয়াদি জেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার সাফ কথা, বেকারদের এমনিতেই আয়-রোজগার নেই, ওরা টাকা দেবে কোথা থেকে। ওদের টাকা আর নেয়া যাবে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যয় মেটানোর আলাদা প্রক্রিয়াটি তাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই আদেশ জারি হবে।
এদিকে সরকার চাকরির আবেদনকারীদের জন্য বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন থেকে চাকরির জন্য নিজ হাতে লিখিত আবেদন করতে হবে না। আবেদনের সঙ্গে অসংখ্য সনদের ফটোকপি দেয়ারও বিধান বাতিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরির আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কিনা বা আবেদন সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে বছরের পর বছর আবেদন ফেলে রাখা হয়। বিশেষ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদের নিয়োগের বিলম্ব খুঁজতে গিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষিতে যারা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করবেন তারাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন এমন সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে।
আবেদনের সঙ্গে জš§সনদ, নাগরিক সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ, চারিত্রিক সনদসহ অনেক ধরনের কাগজপত্র সংযুক্ত করার বিধান ছিল। এটা আবেদনকারীদের জন্য অতিরিক্ত বিড়ম্বনা। তিনি চাকরি পাবেন কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই অথচ তার আগেই আবেদন করতে গিয়ে তাকে নানা ঘাটে পয়সা গুনতে হয়, না হয় হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। এসব থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের মুক্তি দিতেই সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু নির্ধারিত ফরমে চাকরিপ্রত্যাশীকে আবেদন করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার সময়ে আবেদনপত্রে উল্লেখ করা শর্তের সপক্ষে প্রমাণপত্র হাজির করতে হবে। তবে আবেদন ফরমে প্রার্থীকে অঙ্গীকার করতে হবে যে, তার দেয়া তথ্য সঠিক। ভুল তথ্য দিলে প্রার্থী আইনানুগ শাস্তি গ্রহণে বাধ্য থাকবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতর-অধিদফতরসহ সব প্রতিষ্ঠানকে সরকারের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফরমের ছকও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অনলাইন বা ফরম ডাউনলোড করে খামেও আবেদন করা যাবে।
এসব পদক্ষেপে চাকরিপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমবে এবং চাকরি দেয়ার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দূর হবে বলে মনে করছেন প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক পাতার আবেদনে সংযুক্ত করতে হবে শুধু ৫/৫ সেন্টিমিটার সাইজের সদ্য তোলা দুই কপি ছবি। পদের নাম, বিজ্ঞপ্তির তারিখ, প্রার্থীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, জন্মজেলা, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, প্রার্থীর বয়স, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, বর্তমান ও স্থায়ী, জাতীয়তা, ধর্ম, জেন্ডার, পেশা শিক্ষাগত যোগ্যতা, বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, পাসের সাল, গ্রেড/শ্রেণী বা বিভাগ, মোবাইল বা টেলিফোন নম্বর বা ই-মেইল যদি থাকে। পরিশেষে প্রার্থীর স্বাক্ষর।
এসব তথ্যের সপক্ষে কোনো সনদ সত্যায়িত করে সংযুক্ত করার দরকার নেই। শুধু মৌখিক বা চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষার সময়ে তা হাজির করতে হবে।
