২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে সিটিভির শিল্পীদের সংবাদ সম্মেলন

“ সম্মিলিত শিল্পী সমাজ- বেতার ও টেলিভিশন চট্টগ্রাম ” এর পক্ষ থেকে বিটিভি চট্টগ্রাম  কেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতি , শিল্পী সমাজের বিভিন্ন দাবী দাওয়া  এবং ৬ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শিল্পীদের অবস্থান জানাতে আজ মঙ্গলবার ৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলানায়তনে  এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন বিটিভির সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী ফরিদ বঙ্গবাসী ।[ad id=”28167″]

 তিনি বলেন আপনারা সবাই অবগত আছেন ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র । প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এ কেন্দ্রটি নানা প্রকার অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। মানহীন আর এক ঘেয়েমি অনুষ্ঠান নির্মাণের কারণে বেশির ভাগ দর্শক শ্রোতা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এই কেন্দ্রের অনুষ্ঠান থেকে । কিছু অসাধু কর্মকর্তা আর এক শ্রেণীর দালাল কর্তৃক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে এই কেন্দ্রটি ।। যার ফলে এখানে সুরকার সঙ্গীত পরিচালক , বাদ্যযন্ত্রী ,  গ্রন্থনা ও পাণ্ডুলিপি রচয়িতা, গীতিকার তালিকাভুক্তি ও শ্রেণি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এত বেশি অনিয়ম হয়েছে , যেখানে অনিয়মটাই নিয়মে পরিনত হয়েছে । অসাধু আর দালালদের ক্ষমতা এত বেশি ছিল , যেখানে সাধারণ শিল্পীরা ছিল অসহায়। এই কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বেচা কেনা হত রাস্তাঘাটে। “ টাকা দিলে সুরকার টাকা দিলেই শিল্পী “ অনিয়মের ভুত এখনো সিটিভির ঘাড়ে “ এই জাতীয় অনেক মুখ রোচক শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে জাতীয় এবং স্থানীয় অনেক সংবাদ মাধ্যম ।

    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চলচিত্র অভিনয় শিল্পী পঙ্কজ বৈদ্য সুজন । তিনি বলেন , এই দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানটি কখনোই যে দুর্নীতি মুক্ত হতে চেষ্টা করেনি, তা নয়, কিছু গুনি এবং ভালো মানুষ চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা পুরোপুরি সফল হয়নি সময় স্বল্পতা কিংবা অপশক্তির প্রভাবের কারণে। তারা কিছু অসাধু কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত এবং কিছু দালাল গোছের শিল্পিকে শাস্তি স্বরূপ কালো তালিকাভুক্ত করেছে এবং এসব দালালেরা তাদের চেহারা পরিবর্তন করে নিজেদের সাধু সাজিয়ে আবার সাদা হওয়ার চেষ্টা করেছে এবং অনিয়মের পথ পরিষ্কার করেছে।

বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের এই কেন্দ্রটি স্বতন্ত্র চ্যানেল হিসেবে ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়ায় চট্টগ্রামের শিল্পীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে এবং শিল্পীরা তাদের অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় , মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবে প্রতিফলিত না হয় , একটি অসাধু মহল সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে । যা চট্টগ্রামের সম্মিলিত শিল্পী সমাজ কখনো কামনা করেনা ।

 বর্তমানে টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজারের পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন প্রখ্যাত কথা  সাহিত্যিক শওকত ওসমানের সন্তান   বরেণ্য তথ্য ও সম্প্রচার বিশেষজ্ঞ জা নেসার ওসমান । তার ভাই ইয়াফেস ওসমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বিগত ৩ মাস আগে। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে টিভি কেন্দ্রের দুর্নীতি এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে । কিন্তু হতাশার বিষয় এখনো এই কেন্দ্রে কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী রয়ে গেছে, যারা দালাল চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে সাধারণ শিল্পীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে । এদের মধ্যে অনেকেই ৬ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ঘোর বিরোধী । এদের চিহ্নিত করা আজ সময়ের দাবী ।  এই সকল সীমাবদ্ধতার মাঝেও অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মান সম্পন্ন অনুষ্ঠান নির্মানের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ।

 কিন্তু আমাদের সাধারণ শিল্পীদের অনেক ন্যায্য চাওয়া পাওয়া অপুর্ন রয়ে গেছে । যেহেতু টিভি কেন্দ্রের বিভিন্ন শাখাতে সংস্কার কার্যক্রম চলছে , তার ই প্রেক্ষিতে বহুদিন ধরে শিল্পীদের অপূর্ণ থাকা দাবী গুলো পর্যায় ক্রমে  বাস্তবায়নের জন্যে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর বরাবরে তুলে ধরা হল ।।

শিল্পীদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন , সঙ্গীত শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক দীপেন চৌধুরী । শিল্পীদের দাবী গুলো হচ্ছে

  ১।  এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী দালাল হিসেবে পরিচিত শিল্পীদের নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট , যারা অতীতের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নিয়ে নিরীহ শিল্পীদের জিম্মি করে অবৈধ আয়ের মহোৎসব গড়েছিল , বর্তমান প্রশাসন তাদের সিন্ডিকেট ভেংগে দেয়ায় তাদের গাত্র দাহ শুরু হয়ে গেছে । সিন্ডিকেটের দালালেরা প্রশাসনকে তাদের হাতের পুতুল বানাতে না পারায় তারা বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে , যা দেশবাসীর কাছে আমাদের এই টিভি কেন্দ্রের বর্তমান উন্নয়নের সুনাম চরম ভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং আমাদের যোগ্যতা সম্পন্ন শিল্পীদের ভালো কাজ গুলোকে মানুষের কাছে প্রশ্ন বিদ্ধ করা হচ্ছে , যা অত্যন্ত দুঃখের এবং পরিতাপের । তারা মূলত চায় এই কেন্দ্র ৬ ঘণ্টায় উন্নীত না হউক , তাদের হাতে এই কেন্দ্র জিম্মি থাকুক।  কত্পক্ষের কাছে আমাদের দাবি এসব দুর্নীতিবাজ দালালদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হউক , তাদের অতীতের অপকর্মের তদন্ত করা হউক । এখানে আরও উল্লেখ্য যে , সদ্য বদলি হওয়া একজন জেনারেল ম্যানেজার যিনি এই দেশের একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা, তাদের চাহিদা মত অনুষ্ঠান না দেয়ায় তার সাথে অস্ত্রের ভাষায় ভয় দেখিয়ে অনুষ্ঠান আদায় করেছিল । যার সংবাদ  বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে ।

২। বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্র একই প্রশাসনের অধীনে হওয়া সত্ত্বেও শিল্পী সম্মানীর ক্ষেত্রে এখনো চরম বৈষম্য রয়ে গেছে, একই শিল্পী ঢাকা কেন্দ্রে গান করলে যে সম্মানী পায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রে দেয়া হয় তার অর্ধেক সম্মানী । আমাদের অন্যতম দাবী , অচিরেই এই বৈষম্যের অবসান হউক ।

৩। এই টিভি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ২০০১ সালে একটি অডিশন হয়েছিল , কিন্তু একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও এখনো পর্যন্ত কোন অডিশনের আয়োজন করতে পারেনি । এতে ভালো পরিবেশনা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী নৈমিত্তিক শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করে আসছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে । আমরা চাই টিভি কতৃপক্ষ খুব অল্পসময়ের মধ্যে একটি অডিশনের আয়োজন করবে ।

৪। আমাদের এই টিভি  কেন্দ্র নামে পূর্নাংগ হলেও এখনো ভালো মানের কোন অডিও স্টুডিও না থাকায় শিল্পীরা বাইরে থেকে নিজ অর্থে অডিও রেকর্ড করে গান গাইতে হয় , এতে শিল্পীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । আমরা চাই এর অবসান হউক ।

৫। অতীতে যত ধরনের অনিয়মে তালিকাভুক্তি, শ্রেণী উন্নয়ন সহ অনুষ্ঠান বিতরণ করে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে , তার তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হউক ।

৬। অনেক সীমাবদ্ধতা পার করে টিভি কেন্দ্রের অনেক উন্নয়ন আমাদের কে আলোর পথ দেখাতে শুরু করেছে , এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, শিল্পীদের কারেন্ট চেক প্রদান , পরিবেশগত উন্নয়ন, মেকআপ রুমের আমূল পরিবর্তন, আউটডোর চিত্র ধারণ ও এডিটিং সুবিধা সহ অনেক কিছু । আরও উল্লেখ্য এই সময়ে দেশ বরেণ্য সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ অনুপম সেন , কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন , ডঃ হরিশংকর জলদাস , চ বি র ভিসি ডঃ ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মত গুনি জনদের দেখা গেছে টিভির পর্দায়, যা অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ ।

   সঙ্গীত পরিচালক দিদারুল  ইসলাম বলেন , আমরা বলতে চাই , এই টিভি কেন্দ্র কারো ব্যাক্তিগত অর্থে কেনা সম্পত্তি নয় , যে যার মত ভোগ করবে । আমরা চাই এই কেন্দ্রে চট্টগ্রামের কৃষ্টি, সংস্কৃতি , ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সকল প্রতিভার সমন্বয় ঘটবে , ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানের মানকে ছাড়িয়ে যাবে এই কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সবার সহযোগিতায় ।

অন্যান্যের মধ্যে বক্ত্যব্য রাখেন , গীতিকার ফারুক হাসান , শিল্পী মুন্না  ফারুক , ফযলুল কবির চৌধুরী , সঞ্জিত আচার্য, কল্পনা লালা , ফাহমিদা  রহমান, শিমুল শিল , মুসলিম আলি জনী , আবসার উদ্দিন ওলি , দিলরুবা খানম , রত্না দে , অনামিকা তালুকদার,  আলমগির আলাউদ্দিন, পূর্ণিমা চৌধুরী , হেলাল উদ্দিন চৌধুরী  সহ আরও অনেকে  ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ