[english_date]

শেখর দেবের একগুচ্ছ কবিতা

ব্যর্থ প্রত্নবিদ

তোমার ফসিলের খোঁজে পদ্মাবতির দেশে ঘুরেছে অভিজ্ঞ প্রত্নবিদ। নাম নেই বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়। তবুও প্রেমিকের বুকে আজ তুমি বিলুপ্ত বেসুমার। একদা তোমার প্রবল প্রতাপে কেঁপেছে শিহরিত দেহের চরাচর। অদ্ভুত অসীম ডানার আড়ালে ছিল আদিমতার বহুবর্ণ কলা। দুপাশে মেলেই খুলে দিতে উর্বর উদ্যান। পুষ্ট ঠোঁটের শিল্পে অধম সাধক পেয়েছিল নতুন নির্বাণ। অথচ বোধীর বিরুদ্ধে গড়ে নিলে নতুন ভুবন। আনাড়ি প্রত্নবিদ এ গ্রহে খুঁজেও পায়নি কোন প্রেমের ফসিল!

ঋতুরুগ্ন ময়ূর

আহত পাখিদের ভিড়ে
বিষাদ ময়ূর মেলেছে বহুবর্ণ পেখম
ঋতুরুগ্ন মেয়ের কাজল চোখে
বিবিধ ব্যথায় জ্বলে আত্মহন্তারক আলো
খসে যায় সমব্যথী পেখম-পালক আর
বসন্তের পাখিরা খুঁজে স্বেচ্ছা-নির্বাসন।

সুপুষ্ট ঠোঁটের স্বর্গে
নিজেকে ইন্দ্র ভেবে লাগিয়েছি দোলা
জ্বলে ওঠা দেশালাই বারুদে পুড়ে
বারবার পবিত্র হয়েছি নিবিড় মৈথুনে।

তোমায় ছুঁলেই বৈশাখী ঝড়!
তুমুল ভাঙে মাতাল এলোহাওয়া
পালক ছেঁড়া পাখি
বুকের ভেতর নীরব নিনাদ তোল
এমন দিনে যদি আমায় ভোল
দুপাশে ব্যাথার ডানা মেলে
দূর আকাশে যাবো আমি উড়ে!

মৌল জিব অথবা স্যাকুলার রঙ

অতঃপর ঘুমসমেত স্বপ্নকে দিলাম বিকিয়ে। বিনিময় যোগ্য ছিল না কিছুই। দিয়েছো প্রগাঢ় নির্লিপ্ত প্রপাতের সৌন্দর্য। যার মায়ার ভেতর ডুবে নিয়েছি অদ্ভুত সভ্যতা! উদারতার পরিধি ছাড়িয়ে ক্রমশ পেয়েছি বুদ্ধের বাসনা। শ্রমণের ধ্যান ভাঙা শরীরে মেখে দিয়েছো বোধীজল। জলের ঘ্রাণে পেয়েছি হাজার বছরের মাটিমগ্ন মানুষের প্রাণ।

যমুনায় প্রেম বিলিয়ে দেখেছি- এখানে আমার কোন রাধা নাই। বিদ্যাপতির বধুরা ঘুরে পতিত পথের মায়ায়। বিবিধ রক্তস্রোতে গড়া আদিম অসুরেরা নিমেষে নষ্ট করে নিষাদ মায়া আর ভাটির মমতা। স্যাকুলার রঙ মেখে ছিনিয়ে নেয় বাগানের ফুল আর মৌল জিবে চেটে খায় মধু। এসবের নষ্ট কষ্টে ঘুম বিকিয়ে স্বপ্নের আশায় ঘুরি প্রলুব্ধ নগরে।

উত্তরাধিকার

অবশেষে রয়ে যাই আমার ভেতর। রঙ যতো আসে কাছে- উড়ে যায় বিবর্ণ বাতাসে। তোমাদের সুখ আছে হেঁয়ালি চোখে। মোলায়েম মন নিয়ে কে আসে বুকে? হিসেবের খাতা খুলে কষে রাখো নিপুণ কলা! যার তোলা ভার বেশ, তারে আর যায় না ভোলা। পকেটে মুদ্রা আছে- মন নাই কিছু- বাড়িতে অঢেল উত্তরাধিকার। তার কোল অতি ভালো মনে কতো রঙের বাহার!

আমার তো বাড়ি আছে আকাশের মাঝে। কখনো তা নেমে আসে বিকেলের বিলে- হয়তো বা পাখিদের সাথে। গাছের পাতায় রাখি নিদারুণ ভোর। ফুল দিয়ে কিনে আনি বৃষ্টির ধারা। ঘরে এসে গায় গান বেনামী মানুষ। পাহাড়ি পাথর ঠেলে নদী আসে কাছে। তারে বুকে টেনে নিই নিবিড় নিনাদে। পেয়েছি বাতাস-বৃক্ষ-নদী, দখলে রাখিনি যদি- তবু এ আমার উত্তরাধিকার।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ