৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শূন্য পড়ে আছে নওগাঁর ৯৫৫টি শিক্ষক পদ

দীর্ঘদিন ধরে নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ১হাজার ৩৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২২টির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া এসব উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ৮৩৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ১৮টি ও সহকারী শিক্ষকের ৬৪টি পদ খালি আছে। এ ছাড়া আত্রাইয়ে প্রধান শিক্ষকের ১০টি, সহকারী শিক্ষকের ৪১টি; ধামইরহাটে প্রধান শিক্ষকের ৫টি, সহকারী শিক্ষকের ৭৮টি; মান্দায় প্রধান শিক্ষকের ১৬টি, সহকারী শিক্ষকের ৩৯টি; নিয়ামতপুরে প্রধান শিক্ষকের ১৩টি, সহকারী শিক্ষকের ৯০টি; পোরশায় প্রধান শিক্ষকের ৫টি, সহকারী শিক্ষকের ৯৭টি; বদলগাছীতে প্রধান শিক্ষকের ৯টি, সহকারী শিক্ষকের ৮৭টি; মহা-------দেবপুরে প্রধান শিক্ষকের ১৮টি, সহকারী শিক্ষকের ৯১টি; পত্নীতলায় প্রধান শিক্ষকের ৭টি, সহকারী শিক্ষকের ৯৭টি; রাণীনগরে প্রধান শিক্ষকের ১৫টি, সহকারী শিক্ষকের ৭৬টি এবং সাপাহার উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৬টি ও সহকারী শিক্ষকের ৭৩টি পদ শূন্য আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন সে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে মাসিক সভা, প্রতিবেদন তৈরি ও দাপ্তরিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। আবার যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সে বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজ দুটোই একসঙ্গে চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও শিক্ষকদের গুণগত শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সারা বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থাকায় শ্রেণি শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। সে সব ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দাপ্তরিক কাজ করতে দু’একটির বেশি পাঠ দান করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এতে বিদ্যালয়ে দুই জন সহকারী শিক্ষক সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা সব ক্লাশ নিয়ে থাকেন। এ কারণে পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হয়। জেলার অনেক বিদ্যালয় আছে শিক্ষার্থীদের তুলনায় যেখানে শিক্ষক বেশি আছেন। আবার অনেক স্কুল আছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় মাত্র ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ মাত্র তিনজন শিক্ষক আছেন।
আরো জানা গেছে, বিদ্যালয়ে পাঠদান সকাল থেকে ১২টায় প্রথম শিফট শেষে হয়ে ১৫ মিনিট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১২টা ১৬ মিনিট থেকে আবারও পাঠ দান শুরু হয়। অথচ সরকারি নিয়ম আছে কোন শ্রেণিতে পাঠ শুরু করার আগে পাঠ প্রস্তুতি গ্রহণ করে শ্রেণিকক্ষে যাওয়া। কিন্তু শিক্ষক কম থাকায় এক সাথে একজন শিক্ষককে এক সাথে দুটি শ্রেণিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা পাঠদান দিতে হয়।

মহাদেবপুর উপজেলার খসালপুর সিদ্দিকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, পাঁচজনের জায়গায় আমরা তিনজন শিক্ষক আছি। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নিয়ামতপুর উপজেলার রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানা বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক।
প্রধান শিক্ষক না থাকার ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি তাঁকে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা চূড়ান্ত হলেই এই সংকট কমে যাবে। এ ছাড়াও সরকার সারাদেশে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

উল্লেখ্য পদগুলো শূন্য থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি পাঠদান কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।ফলে শিক্ষার্থীদের উপর পড়াশুনার চাপ বাড়ছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ