শীতকালীন সবজি লাউ। একসময় গ্রামের নারীরা বসতবাড়ির আঙ্গিনায় শখ করে লাউগাছ লাগাতেন। সেই গাছের লাউ দিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রিও করতেন। তবে কালের বিবর্তনে বর্তমানে সারাবছর লাউ চাষ হচ্ছে। আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণে ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক। দামও পাচ্ছেন বেশ ভালো। যে কারণে বছর যাচ্ছে আর বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষের দিকে ঝুঁকছেন মানুষ। এরই ধারাবিহকতায় জমি লিজ নিয়ে লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার শিক্ষার্থী মো. আল আমিন।
পড়াশোনার পাশাপাশি লাউসহ নানা ধরণের সবজি আবাদ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। শুধু লাউ চাষ করে গত ৩ মাসে ৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। আল আমিনের সফলতা দেখে এলাকার অনেকে এখন লাউ চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আল আমিন সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের জগন্নাথদী গ্রামের কৃষক লিটু শেখের ছেলে। তিনি যদুনন্দী নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (৩১) সকালে কথা হয় তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। তাই সংসারে আমার দায়িত্বটাও বেশি। পরিবারের দারিদ্রতা বিবেচনা করে আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকা একটি চাকরি করছি। কিন্তু এতে আমার পোষাচ্ছিল না। পরে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে গত বছর পরীক্ষামূলক সবজি চাষ করি। এতে আমার মনে হয়েছিল, সবজি চাষ করে আমি সফল হতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, এবার আমি ৯০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে বেড কেটে লাউ চাষ করেছি। এতে লাউগাছের মাচা, বেড কাটা, সার-ওষুধসহ সব মিলিয়ে আমার ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে লাউক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় প্রচুর পরিমাণে লাউ ধরে গাছগুলোতে। ইতোমধ্যে বেশিভাগ লাউ বিক্রি করে ফেলেছি। গাছে থাকা বাকি লাউগুলো হয়তো কিছু দিনের মধ্যে বিক্রি করে ফেলবো। সব মিলিয়ে হিসেব করে দেখিয়েছি, খরচ বাদে ৯০ শতাংশ জমির লাউ বিক্রি করে মাত্র ৩ মাস ১০ দিনে আমার ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হবে। যদি বৃষ্টিতে ক্ষতি না হতো, তাহলে ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় করতে পারতাম।
আল আমিন বলেন, লাউয়ের পাশাপাশি ৭৫ শতাংশ জমিতে কলা, ২০ শতাংশ জমিতে পেঁপে ও কিছু জমিতে মরিচ আবাদ করেছি। এতেও মোটামুটি আয় হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে লাউ চাষ করবো। আমার লাউ চাষে সফলতা দেখে এলাকার অনেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। তারাও লাউ চাষ করতে আগ্রহী। আমি তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমি চাই আমার মতো সবজি চাষ করে সবাই সফল হোক।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, কয়েকটি হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন আল আমিন। আমাদের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝেই তার লাউক্ষেত পরিদর্শন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নানা ধরণের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই, আল আমিনের মতো তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা প্রত্যেক ঘরে ঘরে তৈরি হোক। আমরা তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবো।