জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ অনেক কিছুই করে। বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে পাড়ি দেয় বিদেশে.. দূরের শহরে। কিন্তু প্রেমিক-প্রেমিকা থাকলে ? উত্তরটা একটু জটিল। সেক্ষেত্রে কোন কম্পানি, বেতন কত, ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল – এসব প্রশ্ন আসে সবার আগে। কারণ এর উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত। মানে, এসব বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় – প্রেমিকাকে ছেড়ে চাকরি, না চাকরি ছেড়ে প্রেমিকা।
বাড়িতে জানাজানি থাকলে, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মা হাত মুছতে মুছতে বলবেন, “কেন ছেড়ে যেতে কে বলল ? চাকরিবাকরি কর। বড় হ। তারপর সময় হলে বিয়ে-টা করিস। কে বারণ করেছে ?”
ব্যাস ওই পর্যন্তই। ওর বেশি আর মায়ের সাথে শেয়ার করা যায় না। মাকে কি আর বলা যায়, অতখানি ভরসাই নেই। আজকালকার মেয়েদের ভরসা করতে আছে ? ওই তো পাড়ার রতনটা কদিন ধরেই পিছনে লেগে রয়েছে। একটুখানি ফাঁক পেলেই, চিলের মতো ছোঁ মেরে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কলেজের বন্ধু বাবাই ? নিজে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। কদিন ধরেই নাকি ওকে মেসেজ করে। “হ্যাপি দশেরা”। “হ্যাপি বার্থডে”। “হ্যাপি দিওয়ালি”। সেদিন ওর ফোন ঘাটতে ঘাটতে দেখলাম। ভাবে আমি কিছু বুঝি না। জিজ্ঞেস করলে বলে, “তোমার সবটাতেই সন্দেহ।”
আসলে প্রেম জিনিসটা আজ বড় টুনকো। হতেও সময় লাগে না। ছাড়তেও সময় লাগে না। আজকাল পথেঘাটে আকছাড় মেলে প্রেম। বাস-অটোর পাশের সিটে, ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে, কলেজ-ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে, রাস্তার মোড়ে, বাস-স্ট্যান্ডে – সর্বত্র। সর্বত্র প্রেম মেলে। ১০ মিনিটের চোরাচাউনি হলেই কনফার্মড। সেটা ব্যাঙ্কের টাকা জমা দেওয়ার লাইনই হোক আর সরকারি হাসপাতালে নাম লেখানোর লাইনেই হোক। ১০ মিনিটের ইতিউঁতি চাউনি ঘুরেফিরে তোমার দিকে আসছে মানেই, এবার তুমি এগোতে পারো। সোজা কানের কাছে “I Love You”।
চারদিকে ভূরিভূরি I Love You। সঙ্গে দু-একটা হার্টের চিহ্ন লাল রঙের। ফেসবুকেও পাওয়া যায়, হোয়াটস অ্যাপেও পাওয়া যায়। বিনে পয়সার মেসেজ দিতে কোনও কষ্ট নেই। শুধু ফরোয়ার্ড করে দিলেই হল। এখন তো শুনছি.. I Love You মেসেজও ফরোয়ার্ড হয়। ফলে প্রেম এখন ভয়ংকর বস্তু।
কিন্তু তাই বলে তো আর বাড়িতে বসে থাকা যায় না। তাহলে কী করণীয় ? চাকরির জন্য যদি প্রেমিকাকে ছেড়ে যেতেই হয়, তাহলে কতগুলো জিনিস মাথায় রাখা উচিত। যেমন :
১. অকারণ আশঙ্কা, সন্দেহ করা বন্ধ করা উচিত। সন্দেহ একটা সময় বাতিকে পৌঁছয়। তখন অতি ভালো সম্পর্কও ঘেঁটে ঘ হয়ে যায়। “কার সঙ্গে দেখা করল, কাকে বাড়িতে নিয়ে গেল.. এই ধরনের প্রশ্ন যদি মনে আসে, তাহলে জানতে হবে ন্যূনতম ভরসা, বিশ্বাস নেই। ফলে এই ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো। সারাজীবনের অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ।
২.একইসঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে, অবিশ্বাস, সন্দেহ, আতঙ্কের কোনও শেষ নেই। সন্দেহ আর অবিশ্বাস – একটা সময় বাতিকে পৌঁছয়। তারচেয়ে সময় থাকতে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা ভালো। এই পাগলামির কোনও শেষ নেই। বরং যাকে ভরসা করা যায়, তার সঙ্গেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।
৩. “Out of sight, out of mind” বলে ইংরেজিতে একটি কথা আছে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা সত্য, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাও ঠিক, যে সম্পর্কে বিশ্বাস, ভরসা নেই… সেই সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ফলে সে সম্পর্ক যদি যায়, যাক। তার জন্য চাকরি বা এই ধরনের কোনও সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
৪. কাউকেই যদি ভরসা না হয়, তাহলে এটা ব্যক্তিগত সমস্যা। এর জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই সমস্যার সমাধান নিজের হাতে। নাহলে বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে ভবিষ্যতে।
৫. পৃথিবীর সব মেয়ে খারাপ – এটা বিশ্বাস করা ঠিক না। সংসারে ভালো, মন্দ মিলিয়ে মিশিয়ে থাকে। অধিকাংশ মেয়েই কিন্তু একাধিক সম্পর্কে বিশ্বাস করে না। আজকের দিনেও অনেক মেয়ে আছে, যারা স্ট্যান্ডিং রিলেশনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কয়েকজনকে দেখে সবাইকে বিচার করা ঠিক নয়।
৬. দূরে থাকলে, প্রেমিকার সম্পর্কে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করাই ভালো। প্রয়োজনে নিজের মতো করে খোঁজখবর নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অন্য কোনও তৃতীয় ব্যক্তির কথায় আগে থেকেই সন্দেহ করতে শুরু করা ঠিক নয়।
৭. লং ডিসট্যান্স সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে ফোনকল, চিঠি ও ভিডিও চ্যাটিংয়ের উপর। ফলে প্রেমিকার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো লুকিয়ে না রাখাই ভালো। এতে বিশ্বাসভঙ্গ হওয়ার জায়গাটা তৈরি হয় না।
৮. নিয়মিত ফোন ও ভিডিও কল করা উচিত। সব ব্যস্ততার মাঝেও প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার।
৯. জন্মদিন, অ্যানিভার্সারির মতো বিশেষ দিনগুলো কোনওমতেই ভোলা যাবে না। পুরুষের সবসময় এসব মাথায় থাকে না ঠিকই। কিন্তু মনে রাখাটা দরকার। প্রয়োজনে ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখা যেতে পারে। সবার আগে উইশ করা, গিফট পাঠানো বা ওই বিশেষ দিনে সেই শহরে পৌঁছে যাওয়া – এই ধরনের সারপ্রাইজ় মেয়েরা বেশ পছন্দ করে।