‘আমাদের হত্যা করুন। তারপরেও দয়া করে মিয়ানমারে পাঠাবেন না।’ ২০০৫ সাল থেকে ভারতে শরণার্থী হিসেবে বাস করা ২৯ বছরের রোহিঙ্গা তরুণ সাব্বিরের আর্তি ছিল এটা।
দিল্লিতে পরিবার নিয়ে একটি ঝুপড়িতে বাস করেন সাব্বির। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত সাব্বির বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভুল, একেবারেই অমানবিক। নিজেদের দেশে চলমান নৃশংসতা থেকে বাঁচতে একটি সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে এসেছে আশ্রয়ের জন্য। আপনি যেখানে জানেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আমাদের জন্য বিপজজ্জনক সেখানে কীভাবে আমাদের সেখানে ফেরত পাঠাতে পারেন?’
গত জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে ধরতে রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশেয়েটিভ (আরএইচআরআই) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন সাব্বির।
তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরন রিজ্জু বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘তারা অবৈধ অভিবাসী। তাদের এখানে বাস করার কোনো ভিত্তি নেই। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হবে।’
নয়া দিল্লিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার ৫০০। তবে নিবন্ধিত হলেও ভারত এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে রাখতে বাধ্য নয় বলে জানান কিরন রিজ্জু।
তিনি বলেন, আমরা তাদের নিবন্ধন বন্ধ করতে পারি না। তবে আমরা শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার চুক্তিতে স্বাক্ষর করা কোনো পক্ষ নই।’
তবে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন অথবা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে ভারত স্বাক্ষর না করলেও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, নির্যাতন, প্রাণঝুঁকি ও স্বাধীনতা হরণের ঝুঁকি রয়েছে এমন জায়গায় শরণার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠাতে পারে না ভারত।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার রঘু মেনন বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি কতোটুকু বিপজ্জনক সেটা বিবেচনার পরও তাদেরকে (রোহিঙ্গা শরণার্থী) জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো শুধু আন্তর্জাতিক আইনেরই লঙ্ঘন নয়, বরং নৈতিকতার দিক থেকেও প্রশ্নবিদ্ধ।’