সুমন তালুকদার : করোনা মহামারীতে ধুকছে পৃথিবী। এই মহামারী থেকে কবে মুক্তি মিলবে কেউ বলতে পারে না। তারপরও মানুষ বাঁচার আশা করে, আশায় বুক বাধে। বর্তমান বিশ্বে করোনা মুক্তির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত ওষুধের নাম রেমডেসিভির।
গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের মিডিয়ায়ও এই নিয়ে বহু সংবাদ ছাপানো ও সম্প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশের ঔষধ কোম্পানি এসকেএফ এর মধ্যেই ওষুধ বাজারে আনার জন্য প্রস্তুত। আরো বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি এ নিয়ে কাজ করছে, হয়ত তাদের পক্ষ থেকেও ঘোষণা আসবে। এই করোনা দুর্যোগে কেমন হবে বা কী রকম ফল দিবে রেমডেসিভির?
প্রথমে বলা নেওয়া যাক, এটি নতুন কোন ওষুধ না। ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে এটি কার্যকর ছিল। মূল বিষয় ছিল কোভিড ১৯ মোকাবিলায় এ ওষুধ কেমন ফল দিবে? যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি গিলিয়েড খুব দ্রুত এর ফেইস ৩ পরীক্ষা শেষ করেছে। তারপরও এটি এখনো ‘পর্যবেক্ষণ’ ও ‘পরীক্ষামূলক’ পর্যায়ে আছে।
ভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস বা কমাতে পারবে না এই ওষুধ, মূলত সংক্রমিত হবার পর সেরে উঠার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর। ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে এটি ভেবে কেও যদি ঘুরে বেড়ান তাহলে হয়ত ভুল করবেন। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ হতে সুস্থ হবার যে সময় তা কমিয়ে আনতে পারে এ ওষুধ। তাও শতভাগ সফলতার কোন খবর পাওয়া যায়নি এখনো। এর মধ্যে আমেরিকান ওষুধ প্রশাসন এটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের মূল সমস্যা এটি দ্রুত সংক্রমণ হয়, যা সময়ের সাথে সাথে অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। প্রচুর সংক্রমিত রোগী একই সাথে হাসপাতালে ভর্তি নিতে হয়, যা হাসপাতালের ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সুস্থতা অতি দ্রুত সময়ে করা সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে ।
ফলে হাসপাতালের রোগীদের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় রেমডেসিভির প্রয়োগে রোগী কম সময়ে সুস্থ হয়ে উঠে। যেমন সাধারণ ভাবে যদি ১৫ দিন লাগে ওষুধ প্রয়োগে লাগবে ১১ দিন বা ১২ দিন। যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে যেখানে লক্ষ রোগী আর সেখানে কোন রোগীকে ০৪ দিন আগে সুস্থ করতে পারা অনেক সুখকর নিশ্চয়।
খুব জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ভাল ফল দিয়েছে বলে গিলিয়েড নিশ্চিত করেছে। তবে এটিও এখনো পরীক্ষাধীন আছে। বিশ্বের অনেক দেশ এ নিয়ে কাজ করছে। কেউ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। চীন দুই জনের উপর পরীক্ষায় এর পজেটিভ ফল পেয়েছে বলে জানিয়েছে। জাপান সরকার এটি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও উৎপাদনের বিষয়ে মন্তব্য করে নাই। জাপান সরকার একই সাথে তাদের দেশের এভিগান ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এভিগান ইনফ্লুয়েঞ্জা ড্রাগ নামে পরিচিত। ২০১৪ সালে জাপান সরকার এটি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও কোভিড ১৯ মোকাবিলায় এটি কার্যকর কীনা তা পরীক্ষিত নয়।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে চীনই প্রথম এই ড্রাগটির কার্যকরের কথা জানিয়েছে। চীনের উয়ান শহরে এই ড্রাগ প্রাথমিক উপসর্গ থাকা রোগীদের দ্রুত সেরে তুলেছিল। বর্তমানে ওষুধটি ফেইস ২ পরীক্ষাধীন আছে। জাপান ইতোমধ্যে ৫৩ টি দেশে এই ওষুধ সরবারহ করেছে ক্লিনিক্যাল টেস্ট করার জন্য। ফুজিফিল্ম এপ্রিল মাসে ম্যাসাচুসেটস-এ দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছিল এভিগানের। এই পরীক্ষায় প্রায় ৫০ জন রোগীকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।
ব্রিগহাম এবং মহিলা হাসপাতাল, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল এবং ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও এর ফল এখনো পাওয়া যায়নি। ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রধান রবার্ট ফিনবার্গ জানান, এটি ভাইরাস দ্রুত সারাবে এবং রোগীর ছাড়পত্র বৃদ্ধি করবে একই সাথে অসুস্থতার সময় কাল কমাবে। বাংলাদেশের বীকন ও বেক্সিমকো ফার্মা এই ওষুধ তৈরি করেছে। বীকন এই ওষুধের নমুনা ক্লিনিক্যাল টেস্ট কারার জন্য ওষুধ প্রশাসনকে দিয়েছে যদিও এর ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তবে রেমডেসিভির বা এভিগান কোন ওষুধ এই রোগের সংক্রমণ কমাবে না। সচেতনতা বা পারস্পরিক দূরত্ব হতে পারে এর উত্তম প্রতিরোধ।
সম্ভাবনা বা ফল যেই আসুক রেমডেসিভির প্রথম কোভিড ১৯ এর ওষুধ বলে স্বীকৃত। তবে করোনা সংক্রমণ বন্ধ না হলে এই ভাইরাস হতে মুক্তি নাই। যতদিন ভ্যাকসিন বের না হচ্ছে প্রতিরোধ হচ্ছে মূল প্রতিষেধক। আরো পড়ুন : গণজমায়েত বন্ধ করা না হলে গণলাশের মিছিল রোধ করা কী আদৌ সম্ভব?
সাবেক ব্যাংকার
smntalukder@gmail.com