১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রুশ আক্রমণের পর প্রথমবার খারকিভে জেলেনস্কি

রুশ আক্রমণের পর প্রথমবার খারকিভে জেলেনস্কিরাশিয়ার আক্রমণের পর এই প্রথম সরকারিভাবে কিয়েভের বাইরে গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ঘুরে দেখলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত খারকিভ। সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা কম্যান্ডারকেও সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, খারকিভে সেনা জওয়ানরা প্রাণপাত করে লড়াই করলেও ওই অঞ্চলের সেনাপ্রধান যথেষ্ট কাজ করেননি। সে কারণেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। তবে ওই সেনাপ্রধানকে রাশিয়ার চর বলে সম্বোধন করেননি জেলেনস্কি। এর আগে সেনাবাহিনীর ভেতরে এমন চরদেরও চিহ্নিত করেছেন জেলেনস্কি। তাদের শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।

খারকিভের পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, খারকিভের ৩১ শতাংশ রাশিয়ার সেনা দখল করে নিয়েছে। চার শতাংশ ইউক্রেন ফিরিয়ে নিতে পেরেছে। এখনো সেখানে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার সেনা। কতগুলি বাড়ি সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারও হিসেব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। রবিবার খারকিভে তার যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে একটি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে এলাকা পরিদর্শন করছেন তিনি। তার ঠিক পাশেই ইউক্রেনের জাতীয় সেনাপ্রধান।

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক

রাশিয়ার তেলের ওপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা বা এমবার্গো ঘোষণার বিষয়ে এখনো দ্বিধাবিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রবিবার এ নিয়ে চাপসৃষ্টি করেছেন জেলেনস্কি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার গ্যাসের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল। জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলি তাতে সম্মত হলেও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি বাদ সাধে। তাদের বক্তব্য, তারা সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার দেওয়া তেল এবং গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে এমন প্রস্তাবে সম্মত হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। গত একসপ্তাহ ধরে এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে পরিবর্তনও আনা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সমুদ্রপথে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল নেওয়া যাবে না। তবে পাইপের মাধ্যমে রাশিয়া বিভিন্ন দেশকে যে তেল দেয়, তা নেওয়া যাবে। বস্তুত, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, চেক রিপাবলিকের মতো দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আসে।

কিন্তু নতুন প্রস্তাবেও সকলে সহমত হবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। গোটা বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি করেছে হাঙ্গেরি।

তাহলে কি ইউক্রেন যুদ্ধে এবার দ্বিধাবিভক্ত হলো ইইউ? এ প্রশ্ন উঠছে। স্বয়ং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এ প্রশ্ন তুলেছেন। কেন ইইউ-র নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে এত সময় লাগছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। জার্মানিও বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছে। এদিকে, জার্মানির গ্যাসের মজুত ক্রমশ কমে আসছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন প্রস্তাব মেনে নিলে রাশিয়া জার্মানির গ্যাস বন্ধ করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।

ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে সেনা মোতায়েন করতে পারে

ন্যাটোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রবিবার একথা জানিয়েছেন সংবাদসংস্থা এএফপি-কে। তার বক্তব্য, রাশিয়া প্রথম ন্যাটোর চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ফলে এবার ন্যাটোও পূর্ব ইউরোপে নিজের মতো করে সেনা মোতায়েন করতে পারে।

১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তে পূর্ব ইউরোপে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে পারবে না। অন্যদিকে রাশিয়াও তার সুযোগ নিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ওপর আক্রমণ চালাতে পারবে না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

ন্যাটোর কর্মকর্তার দাবি, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়ে প্রথম সে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ফলে এবার ন্যাটোও পূর্ব ইউরোপে সেনা ঘাঁটি তৈরি করে ফেলতে পারে। এ কাজে আর কোনো বাধা থাকল না।

এরদোয়ানের অবস্থান

অন্যদিকে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগদান নিয়ে এখনো সন্তুষ্ট নন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী নিয়ে ওই দুই দেশের অবস্থানে এখনো সন্তুষ্ট নন তিনি। বস্তুত, কুর্দযোদ্ধাদের সংগঠন পিকেকে নিয়ে চিন্তিত এরদোয়ান। তুরস্কে ওই সংগঠন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে পরিচিত। ন্যাটোর তালিকাতেও তাদের একই পরিচয়। কিন্তু সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড তাদের সন্ত্রাসী বলে মনে করে না বলে দাবি এরদোয়ানের। সম্প্রতি এ বিষয়টি মিটিয়ে ফলতে তুরস্কে গিয়েছিলেন ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি বলেই মনে করা হচ্ছে।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on print

মন্তব্য করুন

সর্বশেষ সংবাদ